নতুন করে হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে মণিপুরে। দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে কুকি এবং মৈতৈ জনজাতির মধ্যে সংঘাত বজায় রয়েছে। এবার সেখ নাগা গোষ্ঠী এবং মৈতৈ জনজাতির মধ্যেও সংঘাত বেঁধেছে বলে অভিযোগ। রিপোর্ট অনুযায়ী, মণিপুরের সেনাপতি জেলায় নাগা গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত বেঁধেছে কট্টর মৈতৈ গোষ্ঠী আমাম্বাই টেনগ্গোলের। উল্লেখ্য, এতদিন ধরে কুকি-মৈতৈ সংঘাতে নাগারা কোনও পক্ষ নেয়নি। নাগা জনজাতির মানুষজন এতদিন ধরে মৈতৈ এবং কুকি, উভয় পক্ষের সঙ্গেই মিলেমিশে থাকছিল। তবে এবার নাগা এবং মৈতৈদের মধ্যে সংঘাতের জেরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। (আরও পড়ুন: চুপ থাকবে না ভারত, বোঝালেন মোদী, কানাডার মন্দিরে হামলার জবাবে ট্রুডোকে বললেন কী?)
আরও পড়ুন: LAC-তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে 'ইতিবাচক পদক্ষেপ',এবার কোথায় পা পড়ল ভারতীয় সেনার?
এদিকে সংঘাতের আবহে সেনাপতি জেলায় ৪৮ ঘণ্টার বনধ ডেকেছিল স্থানীয় ৩টি নাগা সংগঠন। পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের জন্যে অবরোধেরও ডাক দিয়েছে তারা। নাগা গোষ্ঠীগুলির অভিযোগ, গত ৩১ অক্টোবর ২ নাগা ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছে মৈতৈ গোষ্ঠী 'আরাম্বাই টেনগ্গোল'। এই আবহে মৈতৈ গোষ্ঠীকে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তুলেছে নাগা গোষ্ঠীগুলি। পাশাপাশি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি তোলা হয়েছে। এই মর্মে সেনাপতি জেলা প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকেও চিঠি পাঠিয়েছে তারা।
উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছিল যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছিল স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এদিকে হাই মণিপুর হাই কোর্টে এই নিয়ে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় হাই কোর্টের তরফ থেকে রায় দিয়ে জানানো হয়, মৈতৈদের নাম তফশিলি উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখুক রাজ্য। এই নির্দেশিকার পরই জো-কুকি সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রতিবাদে নামেন। এই আবহে ২০২৩ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। পরে অবশ্য হাই কোর্ট সংরক্ষণ নিয়ে নিজেদের সেই পর্যবেক্ষণ ফিরিয়ে নেয়।
তবে এখনও বিক্ষিপ্ত হিংসা জারি আছে সেই রাজ্যে। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছিল সেই রাজ্যে। এই আবহে গত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসেই চূড়াচাঁদপুর জেলায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে কুকি আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। আর এখনও পর্যন্ত সেই হিংসা প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশো সাধারণ মানুষ। বাফার জোন করে মৈতৈ এবং কুকিদের ভিন্ন এলাকায় রাখা হয়েছে। তার মধ্যেও মাঝে মাঝেই বাঁধছে সংঘাত। একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে দুই জনজাতি।