বিগত বহু মাস ধরেই হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর। প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে বহু। এর মধ্যে কিছু বিভীষিকাময় ঘটনা সামনে এসেছে দেশের। তারপরই মণিপুর নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। এমনকী সুপ্রিম কোর্টও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করেছে। মণিপুরের হিংসার জেরে সে রাজ্যের সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন বিরোধীরা। তবে সেই পথে না হেঁটে হিংসার তদন্তে সিবিআই-কে নামিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। জানা গিয়েছে, অফিসার পদমর্যাদার মোট ৫৩ জন অফিসারকে মণিপুরের হিংসার তদন্তে নিয়োগ করেছে সিবিআই। এর মধ্যে ২৯ জনই মহিলা অফিসার। এই দলে তিনজন ডিআইজি পদমর্যাদার আধিকারিক রয়েছেন। তাঁরা হলেন - লাভলি কাটিয়ার, নির্মলা দেবী এবং মোহিত গুপ্ত। উল্লেখ্য, মনে করা হচ্ছে এই প্রথম কোনও তদন্তকারী দলে এত সংখ্যক মহিলা অফিসার একসঙ্গে নিয়োগ করল সিবিআই। এই দলে রয়েছেন দু'জন অতিরিক্ত এসপি এবং ৬ জন ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার। এরা সবাইও মহিলা। এছাড়া দলে আছেন ১০ জন ইন্সপেক্টরও।
উল্লেখ্য, গত ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অভিযোগ উঠেছে কুকি ‘জঙ্গিরা’ অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই আবহে কুকি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে সেই রাজ্যে। এরই মাঝে গত জুলাই মাসে ভাইরাল হয়েছিল মণিপুর বিভীষিকার এক অকল্পনীয় ভিডিয়ো। দেখা গিয়েছিল, দুই মহিলাকে নগ্ন করিয়ে ঘোরানো হচ্ছে রাস্তায়। পরে তাঁদের মাঠে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ, তাঁদের গণধর্ষণ করা হয়েছিল। সেই ঘটনা ঘটেছিল গত ৪ মে। ঘটনার ৭৭ দিন পর এই মামলায় প্রথম গ্রেফতারি হয়। আর সেই একই দিনে, অর্থাৎ, ৪ মে মণিপুরের রাজধানীতে দুই যুবতীকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সেই মামলায় প্রায় ৮০ দিন পরে গিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল কয়েকজন অভিযুক্তকে।
প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছে যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছে স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এই আবহে গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই আবহে গত এপ্রিল মাসে এই চূড়াচাঁদপুর জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। আর এখনও পর্যন্ত সেই হিংসা প্রাণ হারিয়েছেন ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ।