মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কার করতে আটঘাট বেধে ময়দানে নেমেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। তবে বাস্তবে পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। কর্তৃপক্ষের কঠোর অভিযানে বহিষ্কার হওয়া একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, তাদের অন্যায়ভাবে বিতাড়িত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের কণ্ঠে উঠে এসেছে সে দেশ থেকে বহিষ্কারের করুন কাহিনী। (আরও পড়ুন: 'অভ্যুত্থান গুজবে' নাম থাকা বাংলাদেশি জেনারেল দেখা করলেন অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে)
আরও পড়ুন-২০২৪-তে বিয়ে, ৬ মাস ধরে চাকরি নেই, আমেরিকায় উদ্ধার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুবকের দেহ
জানা গেছে, টানা ৩৫ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের পর এক দম্পতিকে অভিবাসন কর্মকর্তারা তাদের সন্তানদের সঙ্গে আলাদা করে দিয়েছিলেন। সংবাদ সংস্থা সিএনএন জানিয়েছে, ২১ ফেব্রুয়ারিতে গ্ল্যাডিস গঞ্জালেস (৫৫) এবং নেলসন গঞ্জালেস (৫৯)-কে অবৈধ অভিবাসী অভিযোগে গ্রেফতার করে মার্কিন প্রশাসন। এরপরে ১৮ মার্চ কলোম্বিয়ায় পাঠানোর আগে পর্যন্ত ওই দম্পতিকে ৩ সপ্তাহ ধরে আটকে রাখা হয়।ওই দম্পতির ৩ কন্যা রয়েছে।তাদের মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে। দম্পতির এক কন্যা স্টেফানি গঞ্জালেজ জানিয়েছেন, তার বাবা-মা গত মাসে সময় মতো সান্তা আনার একটি অভিবাসন আদালতে হাজির হয়েছিলেন, ঠিক যেমনটি তারা ২০০০ সাল থেকে করে আসছেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাসন কেন্দ্রের তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে অপরাধীদের মতো আচরণ করা হয়েছে। যার জেরে তাদের পরিবার মানসিক ও আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছে। (আরও পড়ুন: 'বিদেশের মাটিতে ভারত বিরোধীদের মারছে', RAW-কে নিষিদ্ধ করার দাবি মার্কিন কমিশনের)
আরও পড়ুন: 'গোপন ইন্টেল' পাওয়ার পর মার্কিন বাহিনীর কর্তার সাথে বৈঠক বাংলাদেশি সেনা প্রধানের
তবে এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, ডালাস অঙ্গরাজ্যের অভিবাসন কার্যালয়ে অ্যাপয়েনমেন্ট অনুযায়ী সাক্ষাতের জন্য গিয়েছিলেন ফ্র্যাঙ্কো কারাবাল্লো। তাকে সেখান থেকে আটক করা হয়। শার্লি গারদাদোকে তুলে নেওয়া হয় তার কর্মস্থল থেকে আর মধুচন্দ্রিমা থেকে ফেরার পথে গ্রেফতার হন ক্যামিলা মুনোজ। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে একটি তল্লাশিচৌকিতে এক দম্পতিকে আটক করেন অভিবাসন কর্মকর্তারা। তারা ১০ বছর বয়সি ক্যান্সার আক্রান্ত সন্তানের চিকিৎসার জন্য হিউস্টনের একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেবল ওই দম্পতিকে বিতাড়িত করা হয়। ফলে সন্তানরা তাদের বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এমন একাধিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
জানা গেছে, প্রায় এক দশক আগে অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন শার্লি গারদাদো। তবে এরমধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় বৈধতা অর্জনের সব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন মার্কিন সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট আইজ্যাক করেইয়াকে। তাদের একটি সন্তানও রয়েছে। কিন্তু অধিবাসন নীতির জেরে স্ত্রীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আইজ্যাক। তিনি বলেছেন, 'শার্লি কোনও অপরাধী নয়। সে আমার স্ত্রী, আমার সন্তানের মা। প্রতিটা আইন সে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে।'স্ত্রীকে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ফিরিয়ে আনার জন্য সবরকম আইনি প্রক্রিয়ায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এদিকে, মাকে না পেয়ে তাদের সন্তান ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে না। অন্যদিকে,পুয়ের্তো রিকোর একটি বিমানবন্দরে আটক করা হয় ক্যামিলা মুনোজকে। মধুচন্দ্রিমা শেষে উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করেছিলেন মুনোজ। এরপরও তাকে আটক করায় হতচকিত হয়ে পড়েছেন তার স্বামী ব্র্যাডলি বার্টেল।
আরও পড়ুন-২০২৪-তে বিয়ে, ৬ মাস ধরে চাকরি নেই, আমেরিকায় উদ্ধার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুবকের দেহ
মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের মসনদে বসার প্রথম ৫০ দিনে ৩২ হাজার ৮০৯ জন অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত অর্ধেকই বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসীবিরোধী অভিযানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্যামিলা মুনোজের আইনজীবী ডেভিড রোজাস বলেছেন, 'আমার ২১ বছরের ক্যারিয়ারে এমন ভীতিকর পরিস্থিতি কখনও দেখিনি।'
যাঁরা অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত পেরিয়েছেন, বা ভিসার মেয়াদ শেষের পরেও অবৈধ ভাবে সে দেশে থেকে গিয়েছেন, তাঁদের প্রতি মার্কিন সরকারের অবস্থান কঠোর।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু করেছেন ট্রাম্প। ভারতেও বেশ কয়েক দফায় অবৈধবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।