দিল্লির রানি ঝাঁসি রোডে একটি কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে। ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সাতদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। বিকেলে গ্রেফতার করা হয়েছে বহুতলের মালিককে।
সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, আজ ভোর ৫টা ২২ মিনিটে আগুন লাগার ফোন যায় দমকলের কাছে। ঘটনাস্থলে আসে দমকলের ইঞ্জিন। তারা উদ্ধারকাজ শুরু করে। কারখানার ভিতরে অনেকে আটকে ছিলেন। ৬৪ জনকে উদ্ধার করে লোক নায়েক, আরএমএল ও লেডি হার্ডিঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন আঘাতের জন্য ২২ জনের চিকিৎসা চলছে। পরে উদ্ধারকাজে নামানো হয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলকেও। উদ্ধারকারীরা জানান, আগুন লাগার সময় অধিকাংশ শ্রমিকই ঘুমোচ্ছিলেন। দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। আহত হয়েছেন দুই দমকলকর্মীও।
দমকলকর্মীরা জানান, প্রতিটা তলায় চার-পাঁচটি করে ঘর রয়েছে। নীচের তলায় রয়েছে প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির কারখানা। দু'তলায় রয়েছে কার্ডবোর্ড তৈরির কারখানা। তিন তলায় পোশাকের ওয়ার্কশপ ও চার তলায় জ্যাকেট তৈরির কারখানা রয়েছে। বাড়িতে দুটি সিঁড়ির মধ্যে একটিতে মালপত্র ডাঁই করে রাখা ছিল। ফলে সেখান দিয়ে নামার কোনও উপায় ছিল না। পাশাপাশি, বাড়িটিতে দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল। ফলে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ছিল না ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল বাড়িটি।
লোক নায়েক হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর কিশোর সিং বলেন, "আহতদের অবস্থা গুরুতর নয়। তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা রয়েছে। ৩৪ জনকে মৃত অবস্থায় আনা হাসপাতালে আনা হয়েছিল। মূলত ধোঁয়ার কারণে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে।"
দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লাগে বলে প্রাথমিক অনুমান দমকলের। সংবাদসংস্থা এএনআই-কে এক পুলিশ আধিকারিক জানান, প্রাথমকভাবে মনে হচ্ছে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল। বাড়িটিতে প্রচুর প্লাস্টিক মজুত ছিল। সেজন্য গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল।
দমকলের ডিরেক্টর অতুল গর্গ বলেন, "আজ ভোর পাঁচটা নাগাদ একটি পাঁচতলা বাড়িতে আগুন লাগে। সেই সময় বাড়ির মধ্যে প্রায় ৬০-৭০ জন ঘুমোচ্ছিলেন। তাঁদের অধিকাংশ চুক্তিভিত্তিক কর্মী ও কারখানার শ্রমিক।" তিনি আরও বলেন, "আগুনটা বড়। ঘটনাস্থলে ৫০টির বেশি দমকলের ইঞ্জিন পাঠানো হয়েছে। সকাল সাড়ে নটা পর্যন্ত আমরা কমপক্ষে ৫৬ জনকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। ধোঁয়ার কারণে তাঁরা সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। আমাদের কর্মীরা ভিতরে ঢুকে তাঁদের উদ্ধার করেছেন। বিভিন্ন তলায় তাঁরা ঘুমোচ্ছিলেন।"
আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। তারপরই বহুতলটির মালিক রেহানের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রেহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পাশাপাশি, মৃতদের পরিবারপিছু ১০ লাখ টাকা ও আহতদের মাথাপিছু ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেন কেজরিওয়াল। আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচও সরকার বহন করবে বলে জানান কেজরিওয়াল। পৃথক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবারপিছু ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। গুরুতর আহতদের ৫০,০০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
তার আগে টুইটও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি লেখেন, "রানী ঝাঁসি রোডের দিল্লির আনাজ মান্ডির আগুন অত্যন্ত ভয়াবহ। যারা নিজেদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। প্রশাসন যথাসম্ভব সাহায্য করছে।"
টুইট করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। তিনি লেখেন, "নয়াদিল্লিতে আগুন লাগার মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে। যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতার কামনা করছি। জরুরি ভিত্তিতে সবরকম সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছি।"