'শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতেই হবে', কিংবা 'বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত আনবেই আনবে' - এমন অনেক তর্জন-গর্জন বাংলাদেশের বর্তমান কেয়ারটেকার প্রশাসনের তরফে নানা সময়ে নানা জনের মুখে শোনা গিয়েছে। কিন্তু, এ নিয়ে কি রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে কোনও কথা বা আলোচনা হয়েছে বর্তমান অস্থায়ী প্রশাসনের? একটি শব্দে এর উত্তর হল - না!
বর্তমানে চারদিনের সফরে বাংলাদেশে রয়েছেন গুতেরেস। শনিবার (১৫ মার্চ, ২০২৫) ছিল তাঁর সেই সফরের তৃতীয় দিন। এদিন বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে একটি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন গুতেরেস। ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত হয় এই কর্মসূচি।
স্বাভাবিকভাবেই সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টার কাছে জানতে চান, হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরানোর বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘের প্রধানের সঙ্গে তাঁর কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা।
এই প্রশ্নের জবাবে সরাসরি তৌহিদ জানান, এই বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মধ্য়ে কোনও আলোচনা বা কথাবার্তা হয়নি। তাহলে কী নিয়ে কথা হয়েছে? এরও উত্তর ওই একটি শব্দেই দেওয়া যায়। সেটি হল - রোহিঙ্গা।
সাংবাদিকরা যখন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রশ্ন করতে ও উত্তর পেতে আগ্রহী, সেই সময়ে মহম্মদ তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের এই সফর সরকার ও বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।
পরবর্তীতে তৌহিদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সেই বিবৃতিতে লেখা ছিল - 'এই সফরকালে রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব জানতে পেরেছেন, রোহিঙ্গারা তাঁদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে, নিজস্ব পরিচয় অটুট রাখতে, অধিকার ভোগ করতে ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করতে কতটা মরিয়া।....'
'রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে মহাসচিব তাঁদের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার এই জনগোষ্ঠীর দুর্দশার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং সর্বাত্মক সহায়তা নিশ্চিত করতে তিনি জোরাল আহ্বান জানিয়েছেন।'
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা সমস্যা যে একটি বড় এবং জটিল ইস্যু, এই বিষয়ে কারও কোনও দ্বিমত থাকতেই পারে না। বস্তুত, এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের সমস্যা বা ইস্যু বললেও মারাত্মক ভুল হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু সত্যিই একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু, যার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও অপরিসীম।
কিন্তু, তা বলে যে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানো নিয়ে বাংলাদেশের কেয়াকটেকার সরকার এত গর্জন ছাড়ে, হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এত কঠোর পদক্ষেপ করা হয়, মামলা রুজু করা হয়, রাষ্ট্রসংঘের প্রধানকে নাগালে পেয়েও তাঁর কাছে এ নিয়ে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করলেন না ইউনুস-তৌহিদরা? ফলত, সাংবাদিকরা তো এ নিয়ে প্রশ্ন করবেনই!