একবারও নাম নিলেন না। কিন্তু স্পষ্টতই চিনকে হালকা খোঁচা দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। রাশিয়া-ভারত-চিনের (আরআইসি) বিদেশমন্ত্রীদের ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক আইন মেনে উদাহরণ স্থাপন করতে হবে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলিকে।
আদতে গত মার্চে এই বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের জেরে তা পিছিয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ এবং রাষ্ট্রসংঘের প্রতিষ্ঠা দিবসের ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে রাশিয়ায় বিজয় দিবসের আগের দিনের সেই বৈঠকে ভারতের বিদেশমন্ত্রী জানান, যুগোপযোগী আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বিশ্বাসী নয়াদিল্লি। তারপরই বেজিংকে খোঁচা দিয়ে জয়শংকর বলেন, ‘কিন্তু বর্তমানে চ্যালেঞ্জটা শুধু ধারণা এবং নীতি নয়, সেগুলি মেনে চলারও। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কণ্ঠগুলিকে প্রতিদিন অবশ্যই দৃষ্টান্তকারী হতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনকে শ্রদ্ধা, সহযোগীদের বৈধ স্বার্থকে সম্মান, জোটবদ্ধতার সমর্থন এবং একই ভালো (লক্ষ্যের) পথে এগিয়ে যাওয়াই হল মজবুত বিশ্ব গড়ে তোলার একমাত্র উপায়।’
দুই বিবাদমান শক্তির মধ্যে সীমান্ত বিবাদ নিয়ে রাশিয়া অবশ্য বাড়তি নাক গলায়নি। বরং মস্কোর তরফে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত বিবাদ মিটিয়ে নিতে সক্ষম নয়াদিল্লি এবং বেজিং। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘আমাদের আশা, পরিস্থিতি (ভারত-চিন সীমান্ত বিবাদ) শান্তিপূর্ণ থাকবে এবং ওরা শান্তিপূর্ণভাবে বিবাদের নিষ্পত্তির পক্ষে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছার প্রমাণ দিয়েছে নয়াদিল্লি-বেজিং। ওরা প্রতিরক্ষা আধিকারিক, বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা শুরু করেছে এবং কোনও দেশই এমন কোনও বিবৃতি দেয়নি, যা দেখে মনে হবে যে কোনও দেশ কূটনৈতিক উপায় ছাড়া অন্য কোনও পথে সমাধানসূত্র খুঁজছে।’
আমেরিকা যে বারবার মধ্য়স্থতার প্রস্তাব দিচ্ছে, সেই পথে মস্কো হাঁটবে না, তাও স্পষ্ট করে দেন ল্যাভরভ। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না, বাইরে থেকে কোনও সাহায্য লাগবে না ভারত এবং চিনের। আমার মনে হয় না ওদের সাহায্য করার প্রয়োজন আছে, বিশেষত সেটা দেশজনিত বিষয় যখন। ওরা নিজেরাই সেগুলি (সীমান্ত বিবাদ) মিটিয়ে নিতে পারবে।’
এদিকে, রাষ্ট্রসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভারতের যে গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, তাও জানান জয়শংকর। গত সপ্তাহেই কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ভারত। এবার নিরাপত্তা পরিষদে সেখানে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া। সেদেশের বিদেশমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএনআই বলে, ‘আজ আমরা রাষ্ট্রসংঘের সংস্কার নিয়ে কথা বলেছি এবং রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ভারত জোরদার প্রার্থী এবং আমরা ভারতের প্রার্থীপদকে সমর্থন করি। আমাদের বিশ্বাস, ভারতের নিরাপত্তা পরিষদের পূর্ণ সদস্য হতে পারে।’ তিনি আবার সেই কথাগুলি চিনের সামনে বলেছেন। যে দেশ বারেবারে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে এসেছে।