সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই অভিবাসন এবং নাগরিকত্ব নিয়ে একের পর এক কঠোর নীতি কার্যকর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের কার্যকালের প্রথমদিনই একাধিক নির্বাহী নির্দেশিকায় স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। এর জেরে বহু ভারতীয় প্রভাবিত হতে চলেছেন। অনেক ভারতীয় অভিবাসীর মাথায় গভীর চিন্তার রেখা দেখা দিয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে গতকাল ওয়াশিংটন সফরকারী এস জয়শংকরকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জানতে চাওয়া হয়েছিল, মার্কিন মুলুকে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের যদি ট্রাম্প প্রশাসন 'ডিপোর্ট' করে, তাহলে কী ভারত তাদের গ্রহণ করবে? জবাবে জয়শংকর অকপটে জানিয়ে দেন, ভারতীয় অভিবাসীদের নিজেদের দেশে ফেরার বিষয়ে সবসময়ই ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে ভারত সরকারের। (আরও পড়ুন: নাক কাটল পাকিস্তানের, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পর্দা ফাঁস করে রিপোর্ট 'বন্ধু' তালিবানের)
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের বিদেশ সচিবের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে কথা জয়শংকরের, চিন্তা বাড়বে ইউনুসের?
জয়শংকর বলেন, 'অবৈধ অভিবাসন নিয়ে সব দেশের ক্ষেত্রেই ভারত একই নীতি অনুসরণ করে। আমেরিকার ক্ষেত্রে সেই নীতিতে কোনও হেরফের হয় না। আমরা সব সময়ই বলে থাকি, এই দেশে যদি এমন কোনও ভারতীয় নাগরিক থাকেন যাঁরা বৈধ ভাবে এখানে আসেননি, তাহলে তাঁদের আমরা ফিরিয়ে নিতে কোনও আপত্তি করব না। এটা সব দেশের ক্ষেত্রেই, এই নীতি শুধু আমেরিকার ক্ষেত্রে নয়। এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান নিয়ে আমি সেক্রেটারি রুবিওকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছি।' উল্লেখ্য, মার্কিন অভিবাসন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে অবৈধ ভাবে মার্কিন সীমান্ত পার করতে চাওয়া যে সব বিদেশি ধরা পড়েছেন, তাদের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ সংখ্যক হচ্ছেন ভারতীয়। গতবছর মোট ২৬৪৭ ভারতীয়কে অবৈধ ভাবে সীমান্ত পার করার জন্যে আটক করে আমেরিকা। (আরও পড়ুন: ঊষা ভান্সের ধর্ম কী? তিনি কোন দেশের নাগরিক? জবাবের খোঁজে হন্যে মার্কিনিরা)
আরও পড়ুন: ইজরায়েলে হামাসের হামলায় 'ক্ষতি' হয়েছে আমাদের, বিস্ফোরক ইরানের শীর্ষস্থানীয় নেতা
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরই নির্বাহী নির্দেশিকায় সই করে মার্কিন সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেন। এরই সঙ্গে সিবিপি ওয়ান অ্যাপ বন্ধ করে দেন। তাছাড়া জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করেন তিনি। এদিকে এর আগে স্কুল ও চার্চে অভিযান চালাতে পারত না মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। সেই নিয়মের অবসান ঘটিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে ভারতীয়দের ওপর হয়ত সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে 'জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব' বাতিলের নির্দেশিকাটি। উল্লেখ্য, বিগত প্রায় ১৫০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া শিশুরা 'জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব' পেয়ে আসছেন। তবে সেই অধিকারকে বাতিল করে নির্বাহী নির্দেশিকা জারি করেন ট্রাম্প। এই নির্দেশিকা কার্যকর হবে ২০২৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে। (আরও পড়ুন: সেক্সে 'হ্যাঁ' মানে কি গোপন মুহূর্তের ভিডিয়ো করারও সম্মতি? কি বলল হাই কোর্ট?)
ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী, মার্কিন মুলুকে যদি অবৈধ অভিবাসীর সন্তান জন্ম নেয়, তাহলে সেই শিশুরা আর মার্কিন নাগরিক হবেন না। এদিকে জন্ম নেওয়া শিশুর মা বাবা যদি বৈধ ভাবেই আমেরিকায় গিয়ে থাকেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনও একজন সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নন, তাহলেও সেই শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। এছাড়া কেউ যদি স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা বা টুরিস্ট ভিসায় আমেরিকায় গিয়ে সন্তানের জন্ম দেন, তাহলেও সেই শিশু আর মার্কিন নাগরিক হবে না। এদিকে নয়া নিয়মে যে সব ভারতীদের সন্তান ১০০+ গ্রিন কার্ড ওয়েটিং লিস্টে আছে, তারা মার্কিন নাগরিক হতে পারবে না।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকায় মেক্সিকান বংশোদ্ভূতরা সর্বোচ্চ সংখ্যায় নাগরিকত্ব পেয়েছেন। আর এখন এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা। উল্লেখ্য, মার্কিন সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতীয় এইচ১বি ভিসা প্রাপকদের ২ লাখ ২৯ হাজার ৩৮৬ সন্তান জন্ম নেয় আমেরিকায়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় ২৯ লাখ ভারতীয় অভিবাসী থাকতেন। এই আবহে মার্কিন মুলুকে তাদের জন্মানো সন্তান জন্মসূত্রেই মার্কিন নাগরিকত্ব পেত। তবে ট্রাম্পের নয়া নিয়মে সেই নাগরিকত্ব বাতিল হচ্ছে। যার জেরে মাথায় হাত পড়তে পারে কয়েক লাখ ভারতীয়র।