মধ্যপ্রদেশের চিকিৎসা পাঠে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে আরএসএস–এর বিষয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই রাজনীতিকরণ কেন? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এবার থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতর প্রথম বর্ষের এমবিবিএস ছাত্রছাত্রীদের আরএসএস–এর প্রতিষ্ঠাতা কেশব বালিরাম হেগড়েগর এবং জনসংঘের প্রধান দীনদয়াল উপাধ্যায় নিয়ে শিক্ষা দেবে। তাতে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্য শিক্ষামন্ত্রী। এই নিয়ে এখন হইচই পড়ে গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, এমবিবিএস পাঠক্রমের প্রথম বর্ষে রাখা হচ্ছে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের। যথা—কেশব বালিরাম হেগড়েগর, দীনদয়াল উপাধ্যায়, বি আর আম্বেদকর, চারক, সুশ্রুতা, স্বামী বিবেকানন্দ–সহ আরও অনেকের কথা। এই শিক্ষাবর্ষ থেকেই শুরু হবে বিষয়গুলি নিয়ে পঠনপাঠন। এই বিষয়ে তৈরি হয়েছে পাঁচ সদস্যের কমিটি। যাঁদের অনুমোদনক্রমে আরও অন্যান্য কিছু যুক্ত হতে পারে।
এই প্রসঙ্গে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘আমরা কোনও পরিবর্তন করিনি পাঠ্যসূচিতে। ২০১৯ সালের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের পক্ষ থেকে যা ঠিক করা হয়েছে তাই আছে। আমরা কিছু জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের জীবনী যুক্ত করেছি। ভবিষ্যৎ চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত করতে এবং কঠোর পরিশ্রমে উৎসাহিত করতে এই বিষয়গুলি যুক্ত করা হয়েছে।’
কিন্তু কেন এই ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক আধিকারিক বলেন, ‘সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে দু’হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তাদের শেখানো হবে আর্থিক সমস্যা এবং অন্যান্য অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও কি করে হেগড়েগর ডাক্তার হয়েছিলেন। আর পরে সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। দীনদয়াল উপাধ্যায়ের মানবিক জীবনও ছাত্রছাত্রীর সামনে তুলে ধরা হবে। প্রাচীন স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সমপ্রকে জ্ঞান অর্জনের জন্য চারক থেকে সুশ্রুতা তুলে ধরা হবে এবং বি আর আম্বেদকর ও স্বামী বিবেকানন্দের পাঠ দিয়ে তৈরি হবে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা।’
এই বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী বিশ্বাস সারাং বলেন, ‘আমি এই বিষয়গুলিকে যোগ করতে বলেছি। কারণ আমরা চাই না শুধু শিক্ষা দিতে এবং বিষয়টিতে পারদর্শী করতে। আমরা চাই তাদের দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরি করতে। আমরা তাদের ভারতীয় ঐতিহয় ও নীতি নিয়ে শিক্ষিত করতে চাই। তাই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের পাঠক্রমে নিয়ে আসা হয়েছে।’
মন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যপ্রদেশের সভাপতি ডাঃ অনুরাগ গুপ্ত বলেন, ‘যদি তাঁরা চান ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করবেন তাহলে জনপ্রিয় চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের নিয়ে পাঠ দিন। তাঁরা কখনও বলপূর্বক ছাত্রছাত্রীদের কোনও নির্দিষ্ট নীতি–আদর্শ নিয়ে শিক্ষা দিতে পারেন না। এভাবে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করা হচ্ছে।’