উত্তরপ্রদেশের মীরাটে মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুত খুনে অভিযুক্ত স্ত্রী মুসকান রস্তোগী এবং তাঁর প্রেমিক সাহিল শুক্লা মাদক ছাড়া জেলে ছটফট করছেন। তাঁরা দু’জনেই মাদকে আসক্ত ছিলেন। জেলে গিয়ে তা একেবারেই পাচ্ছেন না। নেশা ছাড়া কাহিল হয়ে পড়ছেন দুই অভিযুক্ত। লকআপের ভিতরে তাঁদের সামলে রাখাই এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সূত্রের খবর, মরফিন ইঞ্জেকশনের জন্য কান্নাকাটি করছেন মুসকান। মাদক চাইছেন সাহিলও। জেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কড়া নজরে রেখেছেন। আপাতত দু’জনেই রয়েছেন মীরাট জেলা সংশোধনাগারে। (আরও পড়ুন: আওয়ামি লিগকে ফেরাতে গোপন বৈঠক ক্যান্টনমেন্টে? বিতর্কে মুখ খুলল বাংলাদেশি সেনা)
জেল সূত্রে খবর, মাদকের উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন মুসকান এবং সাহিল। মাদক ছাড়া এক মুহূর্তও কাটছে না তাঁদের। মুসকান চাইছেন মরফিন ইঞ্জেকশন। সাহিল মারিজুয়ানার জন্য পাগলের মতো আচরণ করছেন। আপাতত জেলের মেডিক্যাল দল তাঁদের সামলাচ্ছে। শুরু হয়েছে নেশা ছাড়ানোর চিকিৎসা। এই পরিস্থিতিতে মুসকান এবং সাহিল যাতে নিজেদের কোনও ক্ষতি না করে ফেলেন, যাতে তাঁদের দ্বারা জেলের অন্য কারও ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা কঠোর নজরে রাখা হয়েছে দু’জনকে। মাদক ছাড়ার চেষ্টা করলে সাধারণত খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হয়। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মুসকান এবং সাহিল প্রথম দিন থেকেই কিছু খেতে চাইছেন না। তাঁদের স্থিতিশীল হতে কিছু সময় পারে। চিকিৎসকেরা জানান, শারীরিক ভাবে দিন দশেকের মধ্যে তাঁরা স্থিতিশীল হতে পারলেও মানসিক ভাবে মাদকের প্রভাব কাটতে অনেক সময় লাগবে। এই ধরনের মাদক মনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। অধিকাংশ নৃশংস অপরাধে মাদকের প্রভাবের প্রমাণ মিলেছে। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হাসিনা বিরোধী ঢেউয়ের বিষয়ে আগে থেকে অবগত ছিল ভারত, বললেন জয়শংকর)
৪ দিন আগে মুসকান এবং সাহিলকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। জানা গেছে, মীরাট জেলা সংশোধনাগারের মহিলা ওয়ার্ডে মুসকানকে রাখা হয়েছে। সাহিল আছেন পুরুষদের ওয়ার্ডে। জেলে আসার কিছু সময় পর থেকেই তাঁরা অস্থির হয়ে পড়েন। প্রথম রাতেই মুসকানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। জেলের চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করে জানান, মুসকান মাদকে আসক্ত। তারপরেই সাহিলের চিৎকার শোনা যায়। মাদক চেয়ে জেলের ভিতর ছটফট করতে থাকেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা দু’জনেই নিয়মিত মাদকের ইঞ্জেকশন নিতেন।
আরও পড়ুন: অশান্ত বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত, পরপর গুলি আরাকান আর্মির, গুলিবিদ্ধ ২
উল্লেখ্য, সৌরভ রাজপুতের হত্যার ঘটনার তদন্ত যত এগোচ্ছে, তত প্রকাশ্যে আসছে তাঁর স্ত্রী মুসকান রাস্তোগি এবং স্ত্রীর প্রেমিক সাহিল শুক্লার নানা কীর্তি। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ২৯ বছরের সৌরভ লন্ডনে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছিলেন স্ত্রী এবং ছ’বছরের কন্যার জন্মদিন পালন করতে। কিন্তু সেই সময়েই তাঁকে হত্যা করেন স্ত্রী মুসকান এবং সাহিল। তাঁদের মধ্যে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সৌরভের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন মুসকান। সেই খাবার খেয়ে সৌরভ অচৈতন্য হয়ে পড়েন। অচৈতন্য হতেই সৌরভের বুকে একের পর এক ছুরির কোপ বসিয়ে দিয়েছিলেন মুসকান।কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হন সাহিল। বাজার থেকে কিনে আনা মাংস কাটার ছুরি দিয়ে সৌরভের মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দেন সাহিল। ১৫টি টুকরোয় সৌরভের দেহ ভাগ করা হয়েছিল। তারপর নীল ড্রামের মধ্যে সিমেন্ট ঢালেন। আবার সিমেন্ট গুলে ড্রামের মুখ আটকে দেন, যাতে দেহাংশের কোনও চিহ্নই কেউ খুঁজে না পান। সন্দেহ যাতে না হয়, তাই দু’জনে মিলে আগে শিমলা ঘুরতে চলে যান। সেখান থেকে সোমবার বাড়িতে ফিরে ওই ড্রাম ফেলে আসার পরিকল্পনা ছিল মুসকান এবং সাহিলের। কিন্তু তার আগেই ধরা পড়ে যান তাঁরা।