শুধুমাত্র হয়রানির অভিযোগ তুলে কাউকে আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য অপরাধী করা যায় না। এর পিছনে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকতে হবে। তাতে প্রমাণিত হবে যে হয়রানির ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আত্মঘাতী হয়েছেন। একটি মামলার ভিত্তিতে এমনই পর্যবেক্ষণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি পিবি ভারালের একটি বেঞ্চ গুজরাট হাইকোর্টের একটি আদেশকে চ্যালেঞ্জ মামলায় এই পর্যবেক্ষণ করেছে।
আরও পড়ুন: মেট্রোয় আত্মহত্যার চেষ্টা? রাজস্থানের যুবকের দাবি, তাঁকে ধাক্কা মারা হয়েছিল!
মামলার বয়ান অনুযায়ী, অতুল সুভাষ নামে ৩৪ বছর বয়সী এক প্রযুক্তিবিদের স্ত্রী আত্মঘাতী হয়েছিলেন। সেই আত্মহত্যার ঘটনায় সুভাষ এবং তার বাবা সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ তুলেছিলেন মহিলার বাবা। ঘটনায় ২০২১ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ এ ধারায় এবং ৩০৬ ধারায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সুভাষ এবং বাবা ও অন্যান্যরা। তবে গুজরাট হাইকোর্ট তাদের মামলা থেকে অব্যাহত দেয়নি। পরে তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথেষ্ঠ প্রমাণ থাকতে হবে যাতে বোঝা যায় যে অভিযুক্তের কারণেই মৃত ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছিলেন। কেবল মাত্র অনুমানের ভিত্তিতে প্ররোচনার জন্য অপরাধী করা যায় না। অবশ্যই স্পষ্টভাবে প্রমাণ থাকতে হবে। এটা ছাড়া, আইনের অধীনে প্ররোচনা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।’
আদালত বলেছে যে ৩০৬ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য মৃত ব্যক্তিকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করা বা ঠেলে দেওয়ার জন্য একটি সুস্পষ্ট কারণ স্থাপন করা প্রয়োজন। যার জন্য একটি নির্দিষ্ট কাজ, কোনও কিছু বাদ দেওয়া, পরিস্থিতি তৈরি করা বা উস্কানি দেওয়া এমন শব্দের প্রয়োজন। আর এই কাজটি অবশ্যই অভিযুক্তের কার্যকলাপ বা আচরণের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হতে হবে যা সরাসরি ব্যক্তির নিজের জীবন শেষ করার সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত।
বেঞ্চ ৩০৬ ধারার অধীনে অভিযোগ থেকে তিনজনকে অব্যাহতি দিয়েছে। যদিও আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে ৪৯৮ এ ধারায় অভিযোগ বহাল রেখেছে। বেঞ্চ উল্লেখ করেছে যে মহিলাটি ২০০৯ সালে বিয়ে করেছিলেন এবং বিয়ের প্রথম পাঁচ বছর ধরে এই দম্পতির কোনও সন্তান হয়নি। যার কারণে মহিলার ওপর শারীরিক ও মানসিক হয়রানি করা হতো। শেষে বিয়ের ১২ বছর পর গলায় দড়ি দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।