পৃথিবীতে প্রাণ কোথা থেকে এল? পৃথিবীর বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই কি প্রাণের বিকাশ? নাকি পৃথিবীর বাইরে থেকে কখনও এসেছিল প্রাণ? তার পরে লালিত হয়েছে এই গ্রহে? এহেন বহু বিধ প্রশ্ন বিজ্ঞানীদের ভাবিয়েছে যুগের পর যুগ ধরে। এর স্পষ্ট উত্তর যে পাওয়া গিয়েছে, তাও নয়। কিন্তু এটা মোটামুটি ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের সঙ্গে বাইরের কোনও সম্পর্ক নেই। যা হয়েছে, এখানেই হয়েছে। যদিও এই ধারণা এবার বদলে যেতে পারে। এমনই আভাস দিচ্ছে খড়্গপুর আইআইটি-র গবেষকদের একটি গবেষণা। আর তার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে একটি উল্কার।
বছর সাতেক আগে অসমের কামারগাঁও গ্রামে একটি উল্কা এসে পড়ে। এটি নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছিলেন খড়্গপুর আইআইটির গবেষকরা। তাঁরা দেখেছেন, এই উল্কায় এমন কিছু উপাদান আছে, যা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া সম্ভব পৃথিবীর বাইরেও প্রাণ আছে, বা বলা ভালো প্রাণ তৈরির মতো উপাদান আছে, এবং সেখান থেকেই হয়তো পৃথিবীতে প্রাণের আগমণ।
হালে খড়্গপুর আইআইটি এবং জাপানের হিরোসিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একসঙ্গে এই উল্কাটি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। তাতেই দেখা গিয়েছে, এই উল্কায় রয়েছে vesicular olivine এবং pyroxene নামের উপাদান। যার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে প্রাণের বিকাশের।
কোথা থেকে এল এই উল্কা? বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝে পাক খাচ্ছিল একটি গ্রহাণু। সেই সময়ে দূর থেকে ছুটে আসে কোনও গ্রহাণু। আর সেটি ধাক্কা মারে এই গ্রহাণুকে। ফলে গ্রহাণুটি বেশ কয়েক টুকরো হয়ে যায়। তার মধ্যে থেকেই একদম ছোট একটি টুকরো পৃথিবীতে এসে পড়ে। সেটিই পড়েছে অসমের ওই এলাকায়।
এই উল্কাখণ্ডের মধ্যে অক্সিজেন, কার্বন, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, এবং সালফারের মতো উপাদান রয়েছে। যেগুলির প্রাণ সৃষ্টির একেবারে প্রাথমিক উপাদান। আর সেই কারণেই বিজ্ঞানীদের ধারণা, এমনই কোনও উল্কাখণ্ড থেকেই এক সময়ে প্রাণের শুরুটা হয়েছিল এই গ্রহে।
তবে এই বিষয় নিয়ে এখনই স্পষ্ট কোনও জবাব পাননি গবেষকরা। তাঁরা বলেছেন, আগামী দিনে আরও গবেষণার পরে বোঝা যাবে, সত্যি সত্যিই পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের সঙ্গে এই ধরের গ্রহাণুর কোনও সম্পর্ক আছে কি না। তবে একথা সত্যি, এই ধরনের কোনও উল্কা থেকে পৃথিবীর মতো গ্রহে প্রাণের সঞ্চার হতে পারে, সে বিষয়ে তত্ত্বগত কোনও ভুল নেই। এমনই বলছেন তাঁরা।