ডিজিট্যাল অ্যারেস্টের ঘটনা রুখতে ভারত সরকার যে বদ্ধপরিকর, মঙ্গলবার লোকসভায় সেই বার্তা দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এদিন তাদের পক্ষ থেকে সংসদের নিম্ন কক্ষে জানানো হয়, 'ইন্ডিয়ান সাইবারক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার' (আইফোরসি) ১,৭০০টিরও বেশি স্কাইপ আইডি এবং ৫৯,০০০টিরও বেশি হোয়াট্সঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করে সেগুলিকে 'ব্লক' করেছে। কারণ, এই অ্যাকাউন্টগুলি ডিজিট্যাল অ্যারেস্টের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
এছাড়াও, আমজনতাকে ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট সম্পর্কে সচেতন করতে সরকারের তরফে এ নিয়ে বিশেষ প্রচার কর্মসূচি চালানো হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এদিন সংসদে একটি লিখিত বিবৃতি পেশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, 'ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিট্যাল অ্য়ারেস্ট নিয়ে একটি সামগ্রিক প্রচার কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। সেই কর্মসূচির আওতায় বহু ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন - ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রকাশ, দিল্লি মেট্রোয় এই বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত ঘোষণা, সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে এই বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো, প্রসার ভারতী এবং বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট নিয়ে প্রচার ইত্যাদি।...'
'...আইফোরসি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ১,৭০০টিরও বেশি স্কাইপ আইডি এবং ৫৯,০০০টিরও বেশি হোয়াট্সঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করে সেগুলিকে ব্লক করেছে। এই অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে ডিজিট্যাল অ্য়ারেস্টের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।'
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ওডিশার ভুবনেশ্বরে আয়োজিত পুলিশ আধিকারিকদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকদের এ নিয়ে প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং।
তাঁর নির্দেশ ছিল, যেভাবে ডিজিট্যাল জালিয়াতি ক্রমশ বাড়ছে, তা রুখতে পুলিশ প্রশাসনকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। অপরাধীরা কীভাবে প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ লুট করছে, তা ভালো করে বুঝতে এবং আটকাতে হবে।
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট নিয়ে সরকারের তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে, প্রত্যেকটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, এনসিবি, সিবিআই, আরবিআই-সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিভাগ ও সংস্থাগুলিকেও এই বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে আরও জানানো হয়েছে, ডিজিট্যাল অ্যারেস্টের ক্ষেত্রে এমন কিছু নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে, যেগুলি আদতে বিদেশি নম্বর, কিন্তু সেগুলির মাধ্যমে যখন ভারতের কোনও গ্রাহকের মোবাইলে কল করা হচ্ছে, তখন সেই নম্বর দেখে যে কারও মনে হবে, সেগুলি ভারতীয় নম্বর।
সরকার ও টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি এক্ষেত্রে মিলিতভাবে এমন এক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে, যাতে এই নম্বরগুলিকে চিহ্নিত করা যায়। এবং তারপর এই নম্বরগুলিকে ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে।
ডিজিট্যাল অ্য়ারেস্ট কিংবা কোনও ধরনের সাইবার ক্রাইমে ব্যবহার করা হয়েছে, এমন ৬ লক্ষ ৬৯ হাজারেরও বেশি সিম কার্ড এবং প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার আইএমইআই নম্বর চিহ্নিত করে সেগুলিকেও ব্লক করা হয়েছে। এই কাজগুলি করা হয়েছে গত ১৫ নভেম্বরের মধ্যে।
দেশজুড়ে সাইবার অপরাধীদের পাকড়াও করতে সাতটি নির্দিষ্ট এলাকার জন্য আইফোরসি-র অধীনে সাতটি জয়েন্ট সাইবার কোঅর্ডিনেশন টিম (জেসিটিটি) গঠন করা হয়েছে। এই দলগুলির সদস্যরা মেওয়াট, জামতাড়া, আহমেদাবাদ, হায়দরাবাদ, চণ্ডীগড়, বিশাখাপত্তনম এবং গুয়াহাটি থেকে সর্বক্ষণ কাজ করে চলেছে। তারা সারা দেশের পরিস্থিতির উপরেও নজর রাখছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, 'সিটিজেন ফিন্যান্সিয়াল সাইবার ফ্রড রিপোর্টিং অ্য়ান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম'-এর মাধ্যমে সাইবার জালিয়াতির খবর পাওয়ামাত্র এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকার লেনদেন তৎক্ষণাৎ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। যার জেরে ২০২১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৩,৪৩১ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ৯.৯৪ লক্ষেরও বেশি অভিযোগের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করে এই সাফল্য এসেছে।