পরিযায়ী শ্রমিকদের মন পেতে এবার উদ্যোগী হল কেন্দ্রীয় সরকার। করোনা সংক্রমণের জেরে যখন দেশজুড়ে লকডাউন চলছিল, তখন পায়ে হেঁটে, কষ্ট করে সাইকেল চালিয়ে মাইলের পর মাইল পেরিয়ে বাড়ি ফিরেছিল পরিযায়ী শ্রমিকরা। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন পরে চালু হলেও পরিষেবা ছিল না। যার ফলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল তাঁদের মধ্যে। তাই সেই ক্ষোভ প্রশমনে সাশ্রয়ী মূল্যের ভাড়া আবাসন প্রকল্পে মাথা গোঁজার জায়গা দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাংলায় ফিরতে গিয়ে খুব চাপে পড়তে হয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের। সামনে বাংলার নির্বাচন। যা বিজেপি’র পাখির চোখ। তাই এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের মন পেতে চাইছে তারা।প্রথম পর্যায়ের এই বাড়ি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে বলে সরকারি আধিকারিক সূত্রে খবর।
জানা গিয়েছে, প্রায় ৭৫ হাজার ফাঁকা সরকারি আবাসনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলিকেই সাশ্রয়ী মূল্যের ভাড়া আবাসন হিসাবে প্রথম দফায় প্রকল্পে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই আবাসগুলি তৈরি হয়েছিল জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশন, রাজীব আবাস যোজনা ইউপিএ আমলে। আর প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা এনডিএ আমলে। এই বিষয়টিকে অনেকে মাছের তেলে মাছ ভাজা বলে মনে করছেন।
এই হাউসিং প্রকল্প ভাড়ার বাজারে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করছেন, হাউসিং ফর অল প্রকল্পের যুগ্ম সচিব অমৃত অভিজাত। তিনি বলেন, ‘ব্যবহৃত না হওয়া আবাসনগুলি আরামদায়ক করে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই খালি থাকা সরকারি আবাসনগুলি তৈরি করতে দু’হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। অথচ সেগুলি ব্যবহার না হয়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। তাই এগুলি জাতির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা এও সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই আবাসনগুলি পরিযায়ী শ্রমিকদের দেওয়া হবে বর্তমান ভাড়া আইন শিথিল করে।’
এই অব্যবহৃত আবাসন কোথায়, কত রয়েছে? সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে ৩২ হাজার ২০২, দিল্লি ২৯ হাজার ২৪৫, গুজরাত ৮ হাজার ৬৫৪, রাজস্থান ৭ হাজার ৪৫, উত্তরপ্রদেশ ৫ হাজার ৯২৩ এবং হরিয়ানা ২ হাজার ৫৪৫। কমপক্ষে ১০.৬ মিলিয়ন পরিযায়ী শ্রমিক কর্মস্থল ছেড়ে চলে এসেছিল নিজেদের গ্রামের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশে। কারণ করোনার জেরে লকডাউন চলছিল তখন। তাঁদের থাকার জায়গা ছিল না। তাই এই নয়া প্রকল্প সাশ্রয়ী মূল্যের ভাড়া আবাসন তৈরির কথা ভাবে কেন্দ্র। আর মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে তা বাস্তবায়িত করা হচ্ছে।
নতুন করে তৈরি করতে গেলে আরও দু’বছর সময় লাগবে। আর এগুলি সাজিয়ে তুলতে সময় লাগবে ২০২১ সালের এপ্রিল মাস। তাই আপাতত আগে এগুলি তৈরি করা হবে তারপর নতুন তৈরির কাজ শুরু হবে। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ভোট। সেখানকার পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজে ফিরলে এই আবাসন তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ফলে একটা পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটব্যাঙ্ক তৈরি হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।