ছৌ নৃত্যকলা ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। শুধুমাত্র বাংলা নয়, অন্যান্য রাজ্যেও ছৌ নৃত্যকলা প্রচলিত রয়েছে। অথচ, আজ পর্যন্ত ছৌ নাচকে 'ধ্রুপদী' নৃত্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু, কেন এমনটা হল? কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের কাছে ঠিক এই প্রশ্নই করেছিলেন বাংলার বিজেপি নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। কিন্তু, তাঁর সেই প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর দিল না সংস্কৃতি মন্ত্রক!
বৃহস্পতিবার সংসদের উচ্চ কক্ষে শমীকের সেই প্রশ্নের লিখিত জবাব দেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্য ছৌ নৃত্যশৈলীর যাতে আরও বিকাশ ঘটে, তার জন্য সরকারের তরফে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। সেসবের বিস্তারিত বিবরণও তুলে ধরা হয়েছে মন্ত্রীর লিখিত জবাবে। কিন্তু, ছৌ নৃত্যকে 'ধ্রুপদী' আখ্য়া দেওয়া হবে কিনা, সেই বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি!
শমীক ভট্টাচার্যের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী লিখেছেন, 'ছৌ নৃত্য-সহ বিভিন্ন পরম্পরাগত শিল্পকলার সংরক্ষণ ও প্রসারে ভারত সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।' বস্তুত, এটাই হচ্ছে গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের লিখিত জবাবের প্রথম লাইন।
কিন্তু, এর ঠিক পরের লাইনেই মন্ত্রী কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন, ছৌ নৃত্যকে 'ধ্রুপদী' মর্যাদা বা স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি তাঁর মন্ত্রকের হাতে নেই! কারণ, এই ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত গ্রহণ করে 'সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি'।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি একটি স্বশাসিত সংস্থা হলেও তা সংস্কৃতি মন্ত্রকেরই অধীনস্ত। তাহলে কেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী এই বিষয়ে কোনও স্পষ্ট উত্তর দিলেন না? সেটাও স্পষ্ট নয়।
তবে, মন্ত্রীমশাই একটি বিষয় বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তা হল - ভারত সরকার ছৌ নৃত্যকে অবহেলা করছে না মোটেই। বরং, ছৌ নৃত্যের প্রসার, বিকাশ ও সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে এবং ছৌ শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে? তারও ব্যাখ্য়া দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট লিখিত জবাবে।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির উদ্যোগে ২০১৮ সালে ঝাড়খণ্ডের চন্দনকেয়ারিতে ছৌ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও মন্ত্রীর যুক্তি, ভারতের বিভিন্ন পরম্পরাগত শিল্পকলা, লোকশিল্প এবং জনজাতীয় শিল্পকলার প্রসার ও সংরক্ষণের জন্য সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি 'গুরুশিষ্য পরম্পরা'কে রক্ষা করে চলেছে এবং এই চিরাচরিত প্রথা মেনেই পরবর্তী প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এই ব্যবস্থাপনার অধীনেই পুরুলিয়া ছৌ, সরাইকেলা ছৌ, ময়ূরভঞ্জ ছৌ-সহ সব ধরনের ছৌ নৃত্যের জন্যই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভারতের কোন কোন রাজ্যের কোথায় কোথায় সেইসব ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তারও সবিস্তার উল্লেখ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কেবলমাত্র ছৌ নৃত্যকে ধ্রুপদী স্বীকৃতি দেওয়া হবে কিনা, বা আজ পর্যন্ত সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি কেন - শমীকের করা সেই মূল প্রশ্নেরই কোনও জবাব মন্ত্রীর পেশ করা উত্তরপত্রে পাওয়া যায়নি!
এই ইস্যুতে শমীক ভট্টাচার্যকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, শমীক তাঁর দাবিতে অনড় রয়েছেন। তাঁর সাফ কথা, ছৌ নৃত্যের জন্য ধ্রুপদী মর্যাদা আদায় করতে যা যা করা দরকার, তা তিনি করবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তিনি থামবেন না।