বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তরে স্বাধীনতা লাভের ইতিহাসকে যাঁরা 'খাটো করতে চাইছেন', তাঁদের খোলাখুলি ভর্ৎসনা জানালেন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। আজ (বুধবার - ২৬ মার্চ, ২০২৫) বাংলাদেশজুড়ে পালিত হচ্ছে 'মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস'। সেই আয়োজনে সামিল হন মির্জা আব্বাসও। আর, সেই সময়েই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এমন কিছু মন্তব্য করেন এই প্রবীণ রাজনীতিক, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিট নাগাদ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন মির্জা আব্বাস। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।
বাংলাদেশের 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা' নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই সম্পর্কে অবস্থান স্পষ্ট করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, 'জুলাই-অগস্টে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন করে স্বৈরাচারকে তাড়িয়ে স্বাধীনতার নতুন স্বাদ পেয়েছি (আমরা)। অনেকেই একে বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতা! আসলে আজকের স্বাধীনতা দিবস প্রমাণ করে, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। যাঁরা সেকথা বলেন, তাঁরা আজকের স্বাধীনতা দিবসকে খাটো করতে চান।'
এরপরই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন মির্জা সাহেব। তিনি বলেন, 'একাত্তরের স্বাধীনতায় তাঁদের কোনও ভূমিকা ছিল না। সুতরাং, এই দিনটাকে তাঁরা খাটো করতে চান! আমি বলব, তাঁরা যেন এখানেই বিরত থাকেন। এই স্বাধীনতা দিবসকে যেন সম্মান জানান এবং সম্মান করেন।'
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জুলাই-অগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের একাংশের মধ্য়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার প্রবল প্রবণতা দেখা গিয়েছে। যে প্রবণতা কট্টরপন্থীদেরও রয়েছে। যদিও অভিজ্ঞ মহলের বিশ্লেষণ হল - শেখ হাসিনার আওয়ামী লিগ যেমন মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার করতে পারবে না, তেমনই বিএনপি-র পক্ষেও সেটা সম্ভব নয়। যার জেরে ইতিমধ্য়েই বিএনপি-র সঙ্গে ইদানীংকালে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা রাজনৈতিক ও বর্তমান প্রশাসনিক শক্তির মধ্যে বিরোধ মাঝেধ্যেই বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
যদিও মির্জা আব্বাস এই বিষয়টিকে নিজের মতো করে এবং অত্যন্ত কৌশলীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, 'অনৈক্য কিছু নেই। স্বার্থের সংঘাত আছে। প্রতিটি দলের নিজস্ব আদর্শগত জায়গা আছে। যার যার একটা মতাদর্শ আছে। যে যার মতাদর্শ থেকেই কথা বলে। এটা আমি অনৈক্য বলব না। এমন সময় যদি কখনও আসে, জাতীয় বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন পড়বে, দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যের প্রয়োজন পড়বে, তখন কিন্তু আমরা সবাই এক হয়ে যাব। এখানে কোনও ভুল নেই।'
মির্জা আরও বলেন, 'এখন দলীয় আদর্শের ভিত্তিতে হয়তো আলাদা কথা বলছি, হতে পারে। কিন্তু যখন প্রয়োজন হবে, তখন বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এক হয়ে যাবে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও আমরা প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ মাঝে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ৫ অগস্টের পর আবার নতুন করে পেয়েছি।'
এরপরই মির্জাকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এক্ষেত্রেও তিনি অত্যন্ত কৌশলী জবাব দেন। সরাসরি অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও বিরোধ তিনি করেননি। কিন্তু, নির্বাচন নিয়ে তাঁরা যে তাঁদের অবস্থানে অত্যন্ত দৃঢ়, সেটা বুঝিয়ে দেন পোড় খাওয়া এই রাজনীতিক।
তিনি বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। আমরা সেখানেই বিশ্বাস রাখতে চাই। এখানে আমরা বিশ্বাসের পরিবর্তন করতে চাই না।' একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, 'বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই প্রতিপক্ষ। নির্বাচন হবে না - এমনটা বিশ্বাস করতে চাই না। তেমন কিছু হলে, সময় এলে দেখা যাবে।'
বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস কিন্তু ইতিমধ্যেই চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চ - জুন মাসের মধ্যে কোনও একটা সময় জাতীয় নির্বাচনে হতে পারে বলে আভাস দিয়ে রেখেছেন। অথচ, বিএনপি নেতা এদিন বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না, এটা তাঁরা বিশ্বাস করতে চান না!