‘ইতিহাস’ শব্দটা শুনলেই অনেকের গায়ে জ্বর আসে। কিন্তু সেই ইতিহাসকেই গল্পের আকারে তুলে ধরেন ইউটিউবার মিঠুন অধিকারী। আর তাতেই মজেছেন দর্শকরা। মিঠুনের ‘রোমাঞ্চ পিডিয়া’ চ্যানেলে ৩ লক্ষ ৮৫ হাজারেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার। নতুন চ্যানেল ‘সিনেমাবাজি’-তেও সাবস্ক্রাইবার বাড়ছে প্রতিদিন। তাঁর অভিজ্ঞতা, ভবিষ্যতের পরিকল্পনাই শেয়ার করলেন হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে।
ইতিহাসের মতো বিষয়বস্তু করে চ্যানেল করার ভাবনা কোথা থেকে এল?মিঠুন : ইতিহাস এমন একটা বিষয় যা অনেকেই পছন্দ করে না। এর কারণ, এটাকে পড়াশোনার বিষয় হিসেবেই দেখেন অনেকে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম ইতিহাসের বিভিন্ন ইভেন্টগুলোকে গল্পের মত করে সাজিয়ে বলব। তাহলে বোরিং লাগবে না এবং সবাই জানতেও পারবে বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ে।
ইতিহাস কি ছোটবেলা থেকেই ভালবাসতেন?
মিঠুন : না, আমার প্রথমে ইতিহাস পছন্দের বিষয় ছিল না। তবে যখন থেকে এই চ্যানেলে ভিডিয়ো বানানোর জন্য রিসার্চ শুরু করি, তখন থেকে এটাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি। আর সত্যি কথা বলতে এখন ইতিহাস ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগে না।
বাংলায় এখনও ইউটিউবে মেনস্ট্রিম বলতে কমেডি ভিডিয়োই বেশি। সেখানে ইতিহাসের মতো গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে এগনোর ভাবনা কেন?
মিঠুন : কমেডি, রোস্ট এগুলো ভাইরাল। সেখানে অনেক বড়ো বড়ো ক্রিয়েটর আছে। তাই আমি প্রথম থেকেই চেয়েছিলাম নতুন কিছু করতে, যা সব বয়সের মানুষ পছন্দ করবেন। এই ভাবেই শুরু হয়।
প্রথম ভিডিয়োয় ভিউ কত ছিল?
মিঠুন : এই চ্যানেলে প্রথম ভিডিয়োয় ২০০-৩০০ টা ভিউ ছিল। তবে এই প্রথম ভিডিয়োটাই ৬ মাস পর ভাইরাল হয়েছিল।
কটা ভিডিয়ো দেওয়ার পর থেকে বুঝলেন যে নাহ, এবার চ্যানেল গ্রো করছে?
মিঠুন : আমি ইউটিউবে চার বছর ধরে আছি। আগে একটা কমেডি চ্যানেল ছিল। তবে সেখানে ঠিক সময় মতো ভিডিয়ো দিতে পারতাম না।
রোমাঞ্চ পিডিয়া খোলার পর প্রাথমিকভাবে মোট সাত-আটটি ভিডিয়ো করেছি। তারপরেই একটা ভাইরাল হয়েছিল। কিন্তু, ইউটিউবে ধৈর্য ধরতে হবে। এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা ২০-৩০টা ভিডিয়ো দেওয়ার পর একটা ভাইরাল হয়।
এখন কি এটাই ফুল টাইম পেশা?
মিঠুন : হ্যাঁ, গত বছর সেপ্টেম্বরে চাকরি ছেড়েছি। তখন একটা সংস্থায় কাজ করতাম। প্রথমটায় খুব ভয় পাচ্ছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস আসে।
আপনার ভিডিয়োগুলি বেশ তথ্যভিত্তিক। রিসার্চের জন্য কী কী করেন?
মিঠুন : রিসার্চের জন্য বিভিন্ন ওয়েব সাইট এবং ইউটিউব কিছু ভিডিয়োর সাহায্য নিই। অনেক সময়ে বই থেকেও সংগ্রহ করি।
স্ক্রিপ্ট তৈরি করেন, নাকি মন থেকেই শ্যুট, ভয়েস ওভার করেন?
মিঠুন : প্রথমে যে বিষয়ের উপর ভিডিয়ো বানাব, সেটার উপর রিসার্চ করি। এরপর সব পয়েন্টগুলো লিখি। তারপর সাজিয়ে আবার স্ক্রীপ্ট লিখতে হয়। এরপরেই রেকর্ডিং।
এই চ্যানেলটা আরও গ্রো করার ক্ষেত্রে বা ডাইভার্স করার কী পরিকল্পনা আছে?
মিঠুন : ইচ্ছে আছে, অ্যানিমেশন নিয়ে আসার। বর্তমানে একটা অ্যানিমেশন কোর্সের কথা ভাবছি। সময় বের করতে পারলেই জয়েন করব।
অন্যান্য কী কী ইতিহাস-ভিত্তিক চ্যানেল দেখেন?
মিঠুন : Study Iq, Study Glows-এ সিদ্ধান্ত অগ্নিহোত্রী এবং মহিপাল রাঠোর স্যারের ভিডিয়ো দেখি। খুবই ইনফরমেটিভ ভিডিয়ো। যেহেতু ওটা পড়াশোনার জন্য, সেজন্য সেখানে ওখানেও অগোছালোভাবে থাকে। ওখান থেকে পয়েন্ট লিখে সাজাতে হয়।
‘সিনেমাবাজি’ বলে একটি চ্যানেল খুলেছেন। সিনেমার ফুটেজ ব্যবহার করছেন তাতে। কিন্তু তাতে ইউটিউবে কপিরাইট স্ট্রাইক খাওয়ার ভয় থাকে না?
মিঠুন : সিনেমাবাজি চ্যানেলটা নতুন খুলেছি, ভালো রেসপন্সও পাচ্ছি। আমি আর আমার বান্ধবী দুইজনে মিলে কাজ করছি। দেখুন, অনুমতি ছাড়া কারও একটা ছবি ব্যবহার করলেও সে স্ট্রাইক দিতে পারে। তবে ইউটিউবের ‘Fair Use’ পলিসি মেনে ছবি, ভিডিয়ো ব্যবহার করলে তেমন একটা সমস্যা হয় না।
বাংলায় কি এখনও ইউটিউবে অনেক ধরনের কাজ বাকি?
মিঠুন : হ্যাঁ, বাংলা ইউটিউবে দর্শক সংখ্যা প্রচুর। এখনও অনেক ভালো ভালো কাজ হতে পারে। সবাইকে বলব, আপনার মধ্যে প্রতিভা থাকলে এগিয়ে আসুন। ধৈর্য ধরে কাজ করুন। ভালো কাজের দাম সবসময়ে পাবেন।
শেষ প্রশ্ন, নতুন ধরণের চ্যানেল যারা খুলছে, তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
মিঠুন : এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। যাঁরা নতুন চ্যানেল খোলেন তাঁরা অনেকেই ৫-৬ টা ভিডিয়ো দেওয়ার পর আর করেন না। ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। এমনটা একদম করবেন না।
আমি চার বছর পর ইউটিউবে সাফল্য পেয়েছি। অনেক খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু কখনও নিজের উপর বিশ্বাস হারাইনি। তাই ধৈর্য ধরে কাজ করুন আর নিজেকে ইমপ্রুভ করতে থাকুন।