উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য অরুণাচলপ্রদেশ-সহ সারা দেশের সুরক্ষা আরও মজবুত করতে উদ্যোগী হল মোদী সরকার। ভারত-মায়ানমার সীমান্ত বরাবর কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করল নয়া দিল্লি। যা এই ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম প্রকল্প হতে চলেছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করবে 'বর্ডার রোড অরগানাইজেশন' (বিআরও)। পুরো প্রকল্পটি কয়েকটি পর্যায় বা ধাপে ভাগ করে শেষ করা হবে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে অরুণাচলপ্রদেশের প্রায় ৮৩ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা কাঁটাতারে ঘেরা সম্ভব হবে। যা দৈর্ঘ্যের বিচারের এই জাতীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক।
এই মুহূর্তে ভারত-মানায়মার সীমান্তের মাত্র ১০ কিলোমিটার অংশ কাঁটাতারে ঘেরা রয়েছে। মণিপুরের মোরে এলাকার কাছে রয়েছে এই কাঁটাতারের বেড়া। এছাড়াও, সম্প্রতি মণিপুরের অন্তর্গত ভারত-মায়ানমার সীমান্তের আরও ২০ কিলোমিটার অংশ সম্প্রতি কাঁটাতারে ঘেরা হয়েছে।
এবার ভারত তার নবতম প্রকল্পটির অধীনে অরুণাচলপ্রদেশের বর্ডার পোস্ট নাম্বার (বিপি)- ১৬৮ থেকে বিপি-১৭৫ পর্যন্ত এলাকা ঘিরে ফেলবে (যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৩ কিলোমিটার)। প্রসঙ্গত, মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের অসুরক্ষিত সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৬৪৩ কিলোমিটার।
সূত্রের দাবি, গত সপ্তাহেই প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে এই প্রকল্প নিয়ে বৈঠক করেছেন বিআরও-র প্রতিনিধিরা। তাঁদের কাছে অতি দ্রুত একটি 'ডিটেলড প্রোজক্ট রিপোর্ট' (ডিপিআর) চাওয়া হয়েছে। এবং অরুণাচলপ্রদেশের অন্তর্গত ভারত-মায়ানমার সীমান্ত বরাবর ৮৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাঁটাতার বসাতে কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, সেই বিষয়েও পরামর্শ ও প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারত-মায়ানমার সীমান্তের সবথেকে বেশি এলাকা অরুণাচলপ্রদেশেরই অন্তর্গত। সব মিলিয়ে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫২০ কিলোমিটার। এছাড়া, মিজোরাম, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডে এই সীমান্তের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে - ৫১০ কিলোমিটার, ৩৯৮ কিলোমিটার এবং ২১৫ কিলোমিটার।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতিদাঙ্গায় বিধ্বস্ত হয়ে আছে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমার। যার জেরে অন্তত কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে নানা মহলের তরফে দাবি করা হয়। অভিযোগ, এর জেরে ভারতে মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে।
এই অবস্থায় ভারতের জন্য দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত 'ফ্রি মুভমেন্ট রিজিম' (এফএমআর) বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, এই ব্যবস্থাপনা অনুসারে, ভারত ও মায়ানমার - দুই দেশের নাগরিকরা কোনওরকম নথি ছাড়াই সীমান্ত পার করে অন্য দেশের ভূখণ্ডে সীমান্ত থেকে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় অবাধে যাতায়াত করতে পারেন।
কিন্তু, মায়ানমারে অশান্তির প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ার পাশাপাশি এফএমআর-এর অপব্যবহার করে মণিপুর-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য রাজ্যগুলিকেও অশান্ত করার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ। এমনকী, মণিপুরে গত প্রায় দেড় বছর ধরে চলা জাতিদাঙ্গার নেপথ্যে এটি অন্যতম প্রধান কারণ বলে দাবি করা হচ্ছে। তাই, অবিলম্বে ভারত-মায়ানমার সীমান্ত সুরক্ষিত করে তোলাটা নয়া দিল্লির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।
ভারত-মায়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া লাগাতে খরচ হবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও, এই সীমান্ত এলাকায় ৬০ কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা নির্মাণ করতে আরও প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে।