ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করতে কতটা সচেষ্ট হবেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু? আপাতত এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে দিল্লির রাজনীতির অলিন্দ্যে। কারণ, রবিবারই সস্ত্রীক দিল্লি পৌঁছেছেন তিনি। আর, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে।
এই সাক্ষাতের পর জয়শংকর তাঁর অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে যে পোস্ট করেছেন, তা নজর কেড়েছে কূটনৈতিক মহলের। বিদেশমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমি নিশ্চিত আগামিকাল (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ওঁর (মহম্মদ মুইজ্জুর) বৈঠক আমাদের বন্ধুত্বকে নতুন মাত্রা দেবে।’
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি সম্প্রতি মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে, আবার তা আগের অবস্থায় ফিরবে? তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, এর জন্য সোমবারের মোদী-মুইজ্জু বৈঠক হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তাহলে ঘটনার গতিপ্রকৃতি অনেকটাই হয়তো স্পষ্ট হবে।
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, নিজের স্বার্থেই চলতি সফরে ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পূর্ণ চেষ্টা করবেন 'চিনপন্থী' মুইজ্জু। সেইসঙ্গে, এই মুহূর্তে মালদ্বীপ যে বিপুল আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়েও ভারতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন তিনি। চাইতে পারেন সহযোগিতা।
উল্লেখ্য, এর আগে গত জুন মাসে দিল্লি এসেছিলেন মহম্মদ মুইজ্জু। কিন্তু, সেটি কোনও দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সফর ছিল না। মুইজ্জু এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী পদে তৃতীয়বারের জন্য নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের অতিথি হিসাবে।
সেবারের সেই অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে আরও ছ'জন আঞ্চলিক রাষ্ট্রনেতাও আমন্ত্রিত ও উপস্থিত ছিলেন। তাই এবারের সফরের গুরুত্ব জুনের সফরের তুলনায় অনেক বেশি।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট পদে মহম্মদ মুইজ্জু বসার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে শুরু করে।
বিমান পরিচালনার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে মালদ্বীপে যে সেনা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল, মুইজ্জু তাঁদের সেখান থেকে ভারতে ফেরানোর দাবিতে সরব হন। সেইসঙ্গে, তিনি এমন একাধিক পদক্ষেপ করেন, যা চিনের স্বার্থ রক্ষা করলেও ভারতের জন্য ছিল সমস্যা সৃষ্টিকারী।

এই প্রেক্ষাপটে রবিবার দিল্লি বিমানবন্দরে মুইজ্জুর সঙ্গেই ভারতে পৌঁছন তাঁর স্ত্রী সাজিদা মহম্মদ। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন আরও প্রায় এক ডজন মন্ত্রী ও আমলা। বিমানবন্দরে তাঁদের স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং।
সূত্রের খবর, এই সফরে ভারতের সঙ্গে একাধিক চুক্তি চূড়ান্ত করবেন মহম্মদ মুইজ্জু। যার জেরে আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রবিবারের এই ভারত সফরের ঠিক আগেই বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুইজ্জু বলেছিলেন, 'আমাদের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারত সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। আমাদের উন্নয়নের অন্যতম শরিক হিসাবে ভারত বরাবরের মতো এবারও আমাদের আর্থিক বোঝা কমাতে সাহায্য করবে। আমরা যেসমস্ত প্রতিকূলতার মুখে পড়েছি, তা কাটাতেও তারা আমাদের নিশ্চিত সাহায্য করবে।'
উল্লেখ্য, মোদী ছাড়াও চলতি ভারত সফরে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। একাধিক বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মুম্বই ও বেঙ্গালুরু যাবেন তিনি। বেঙ্গালুরুতে বসবাসকারী মালদ্বীপীয় বংশোদ্ভূতদের সঙ্গে দেখা করারও কথা রয়েছে তাঁর।