'কোনও এক ব্যক্তি, বা একটি চিন্তাধারা বা একটি গোষ্ঠী একা গোটা দেশ তৈরি বা ভাঙতে পারে না', মঙ্গলবার এমনই মন্তব্য করলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত। তিনি বললেন, 'ভালো দেশগুলির অনেকগুলি ধারণা রয়েছে এবং তারা সমস্ত ধরণের ব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে উন্নয়নের পথে হাঁটে।' মঙ্গলবার রাজরত্ন পুরস্কার সমিতি আয়োজিত এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন মোহন ভাগবত। সেখানে দেশ তৈরি করা নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে বিজেপি যেভাবে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদীই সব পদক্ষেপ করেন। দেশের সব ভালো জিনিসই যেন মোদীর আশীর্বাদেই হয়। তবে বিজেপির এই নীতির ঠিক বিপরীত কথাই শোনা গেল মোহন ভাগবতের গলায়। এদিকে বিজেপি বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই 'এক দেশ, এক নির্বাচনে'র কথাও বলে আসছে। মোহন ভাগবতের 'ভিন্ন ব্যবস্থা' সংক্রান্ত মন্তব্য বিজেপির সেই নীতিরও পরিপন্থি বলেই মনে করা হচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, ভাষার ক্ষেত্রেও 'এক দেশ, এক ভাষা' নীতি কার্যকর করতে চায় বিজেপি। তারা দক্ষিণীদের ওপরও হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দিতে চায় বলে অভিযোগ ওঠে। বিজেপির বিরুদ্ধে চিরকালই অভিযোগ, দেশের বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে তারা। এই আবহে মোহন ভাগবতের এহেন মন্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি হিন্দু ধর্মের বর্ণভেদ প্রথা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় সংঘ প্রধান মোহন ভাগবতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে বিহারের এক আদালতে। অভিযোগ, পণ্ডিতদের নিয়ে মন্তব্য করে ব্রাহ্মণদের অপমান করেছেন ভাগবত। মোহন ভাগবত বলেছিলেন, 'ভগবানের সামনে সকলেই মানুষ। তিনি জাতি-ধর্ম ভেদাভেদ করেননি, তা করেছেন পুরোহিতরা। শাস্ত্রের নামে অনেক পণ্ডিত যা বলেন, তা আসলে মিথ্যা। ক্ষমতা, সম্মানে সব মানুষই এক। কারও সঙ্গে কারও প্রভেদ নেই। অনেক পণ্ডিত শাস্ত্রের নামে যা বলে থাকেন, তা আসলে মিথ্যা। তাঁরাই মানুষে মানুষে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভাগাভাগি করেন। জাতিভেদ প্রথা আমাদের বিপথে চালিত করে। আর যা এমন বিভ্রম তৈরি করে, তা দূরে সরিয়ে রাখাই ভালো।' তাঁর এই মন্তব্যের জেরে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। অভিযোগ ওঠে সংঘপ্রধান জাতপাতের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে ব্রাহ্মণদের অপমান করেছেন। পরে পুরী শঙ্করাচার্য স্বামী নিসচালানন্দ সরস্বতী মঙ্গলবার আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বর্ণ ব্যবস্থা শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের উপহার।