পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেই উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলতে হবে। তবেই ভারত বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারবে। শুক্রবার আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে বক্তব্য পেশ করার সময় এই বার্তা দিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত।
গুরুগ্রামে আয়োজিত হচ্ছে 'ভিশন ফর বিকশিত ভারত - ভিভিভা ২০২৪'। তিনদিনের এই কর্মসূচিতে শুক্রবার যোগদান করেন ভাগবত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং পড়ুয়াদের সামনে মঞ্চে ভাষণ দেন তিনি।
মোহন ভাগবত বলেন, তিনি তাঁর জীবদ্দশাতেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে শীর্ষস্থানে দেখতে চান। তাঁর মতে, অর্থনৈতিক এবং বৌদ্ধিক উন্নয়ন ও তাদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমেই ভারত ফের একবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেবে।
এদিনের ভাষণে বেশ কিছু সমস্যার দিকেও আলোকপাত করার চেষ্টা করেন আরএসএস প্রধান। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে সম্পদের অসম বণ্টন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
ভাগবত লক্ষ্যণীয়ভাবে বলেন, দেশের মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ মোট সম্পদের প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাঁর কথায়, 'এই ধরনের উন্নয়নের জন্য মানুষকে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু, তার ফল যখন আশানুরূপ হয় না, তখন হতাশা তৈরি হয়।'
ভাগবত মনে করেন, অনেক সময়েই এই ধরনের হতাশার ফল খুব খারাপ হয়। যেখানে প্রশাসনকে পর্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ করতে হয়। যা ইদানীং বেশ লক্ষ্যণীয়।
ভাগবত আরও বলেন, ষোড়শ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত ভারত বাকি বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। 'আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছিলাম। কিন্তু, তারপর সব থেমে গেল। এবং আমাদের সভ্যতার পতন শুরু হল।'
মোহন ভাগবত মনে করেন, উন্নয়ন কেবলমাত্র আর্থিক সমৃদ্ধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। উন্নয়ন বলতে মানসিক ও বৌদ্ধিক উন্নতিকেও বোঝায়। তাঁর মতে, বিজ্ঞান হোক বা আধ্যাত্মিকতা - দুইয়েরই উদ্দেশ্য হল, মানবকল্যাণ।
এই বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্য়া, 'যদি আপনি অর্থ উপার্জন করতে চান, তাহলে আপনাকে দৌড়তেই হবে। আপনি যদি আপনার সন্তানদের যত্ন নিতে চান, তাহলে আপনাকে সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ফিরতে হবে। কিন্তু, এসব অর্জন করতে হলে কিছু ত্যাগ স্বীকার করাও জরুরি।'
মোহন ভাগবত মনে করেন, কিছু মানুষ কেবলমাত্র ন্যূনতম কিছু প্রয়োজন মেটানোর জন্যই কাজ করেন। কিন্তু, এতে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এমনকী, এই মানসিকতাকে দুঃখজনক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভারতকে বিশ্বের এক নম্বর দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে স্বতন্ত্র মাপকাঠি তৈরির দাওয়াই দেন ভাগবত। তাঁর মতে, 'আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের ভারতকে এক নম্বরে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য অন্যদের অনুকরণ করার বদলে নিজেদের মানদণ্ড নির্দিষ্ট করতে হবে।'
একইসঙ্গে, শিক্ষাব্যবস্থার বাণিজ্যিকীকরণেরও প্রতিবাদ করেন মোহন ভাগবত।