কোভিড অতিমারীর মোকাবিলায় অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার জেরে দিল্লি সরকার ও পুর নিগমের অধীনে থাকা স্কুলগুলির প্রায় ১,৬৬,০০০ পড়ুয়া স্কুলছুট হয়েছে। অর্থাৎ মোট ছাত্র সংখ্যার ৮.৫ শতাংশই স্কুলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছে।
দিল্লি সরকারের শিক্ষা দফতর ও পুর নিগম সূত্রে পাওয়া এই তথ্য অনুসারে, এই পড়ুয়ারা স্কুল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
সরকারি আধিকারিকদের মতে, কোভিড অতিমারী ও তার জেরে লকডাউনের কারণে কয়েক হাজার পরিবার রাজধানী ছেড়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার ফলে এবং অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
গত জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস নেওয়া শুরু হয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নবম ও একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও স্কুলে ক্লাস করতে দেওয়া হবে।
দিল্লি সরকার এবং পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দিল্লি পুর নিগমের কাছে থাকা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নিখোঁজ পড়ুয়া রয়েছে উত্তর দিল্লি পুর নিগম পরিচালিত স্কুলগুলিতে।
নিগমের অন্তর্ভুক্ত শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের মতে, ৭১৪টি স্কুলের হাজিরা খাতায় নাম থাকা ২,৯০,০০০ পড়ুয়ার মধ্যে ৫৮,০০০ ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে গত ১০ মাসে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। আবার দক্ষিণ দিল্লি পুর নিগম পরিচালিত স্কুলগুলির ২,৮৪,০০০ পড়ুয়ার মধ্যে ৪৪,০০০ ছাত্র-ছাত্রীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য দিকে, পূর্ব দিল্লি পুর নিগম পরিচালিত ৩৬৫টি স্কুলগুলিতে ভরতি ১,৬৮,০০০ পড়ুয়ার মধ্যে ৩৩,৬০০ পড়ুয়ার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিস্থিতি তুলনায় ভালো দিল্লি সরকার পরিচালিত স্কুলগুলিতে। ১,০৩০টি স্কুলের কিন্ডারগার্টেন থেকে দশম শ্রেণিতে ভরতি ১২,৫৫,০০০ পড়ুয়ার মধ্যে ৩১,০০০ ছাত্রছাত্রীর হদিশ পাননি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
ইউনিসেফ-এর হিসাব বলছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে বিশ্বের ৪৬ কোটি শিশু অনলাইন শিক্ষা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। অতিমারীর কারণে গোটা এক প্রজন্মের শিশুরা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, দেশগুলির কাছে এই আবেদন জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
গত কয়েক মাসে দিল্লি সরকার ও পুর নিগমের অধীনে থাকা স্কুলগুলির তরফে পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়ে, চিঠি পাঠিয়ে ও কর্মসূচির মাধ্যমে নিখোঁজ পড়ুয়াদের সন্ধান করার চেষ্টা করেছে কর্তৃপক্ষ।
দিল্লি সরকারের শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের মতে, নিখোঁজ পড়ুয়াদের এক বড় অংশ পুর নিগম পরিচালিত স্কুলের পঞ্চম শ্রেণি থেকে পাশ করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠা ছাত্র-ছাত্রীরা।
রোহিনীর সর্বোদয় কো-এড বিদ্যালয়ের প্রধান অবধেশ কুমার ঝা জানিয়েছেন, ‘আমাদের স্কুলের কমপক্ষে ৪০ পড়ুয়ার কোনও হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মধ্যে ২৫ জন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। অনেক চেষ্টা করেও আমাদের নথিতে থাকা ঠিকানায় তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীদের থেকে জানতে পেরেছি, লকডাউনের কারণে তাদের পরিবার গ্রামে ফিরে গিয়েছে। তারা এখনও পর্যন্ত দিল্লি ফেরেনি।’