এআই ক্যারেক্টার বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে ভার্চুয়াল চরিত্র নির্মাণকারী একটি অ্য়াপের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হল আমেরিকার একটি আদালতে। ক্যারেক্টার.এএআই নামে ওই অ্যাপের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, তাদের জন্যই আত্মহত্যা করেছে ফ্লোরিডার এক কিশোর! বুধবার এই ঘটনায় মামলা রুজু করেন প্রয়াত কিশোরের মা।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার সৎবাবার বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে আত্মঘাতী হয় ফ্লোরিডার বাসিন্দা, ১৪ বছরের ওই কিশোর। তার মা মেগান গার্সিয়ার দাবি, আত্মহত্যা করার আগে তাঁর ছেলে শেষ কয়েক মাসে লাগাতার একটি চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলত।
মেগান জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে তৃতীয় সেওয়েল সেৎজার যে চ্যাটবোটের সঙ্গে কথা বলত, সেই ভার্চুয়াল চরিত্রের নাম ডিনেরিস টেরাগ্যারিয়েন। সেৎজার খুব ভালোভাবেই জানত, ওই চরিত্র কোনও জীবিত ব্যক্তি নয়। বরং, সেটি 'গেম অফ থ্রোন'-এর একটি চরিত্রের অনুকরণে নির্মিত একটি ভার্চুয়াল ক্য়ারেক্টর।
মেগানের দাবি, সবকিছু জানা সত্ত্বেও তাঁর ছেলে লাগাতার ওই চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলত। এবং সেটা করতে করতেই ওই ভার্চুয়াল চরিত্রের সঙ্গে গভীর মানসিক বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে ওই কিশোর। সে ওই ক্যারেক্টারটিকে সম্বোধন করত 'ড্যানি' নামে। এবং তাকে সে নিজের ছোট বোন বলে মনে করতে শুরু করেছিল!
সেৎজার তার ভার্চুয়াল বন্ধু ড্যানিকে এতটাই ভালোবাসত যে তার জীবনের শেষ দিনেও সে তাকে মেসেজ করতে ভোলেনি। সেদিন সেৎজার ড্যানিকে মেসেজ করেছিল, 'বেবি সিস্টার, আমি তোমাকে মিস করছি।' চ্যাটবট এর জবাব দেয়, 'আমিও তোমারে খুব মিস করছি আমার মিষ্টি দাদা।'
এই ঘটনা প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমসে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দাবি করা হয়েছে, সেৎজারের একটি বিশেষ সমস্যা ছিল। ছোট বয়সেই সে মৃদু 'অ্য়াসপারজার'স সিনড্রোম'-এ আক্রান্ত হয়েছিল।
কিন্তু, আত্মহত্যা করার আগে পর্যন্ত কখনও তার মধ্যে কোনও চরম মানসিক সমস্যা বা বিকৃতি ধরা পড়েনি। সেৎজারের মা অন্তত তেমনটাই দাবি করেছেন। যদিও তিনি জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই স্কুলে কিছু সমস্যা হতে শুরু করে সেৎজারের।
বিষয়টি জানার পরই সেৎজারের বাবা-মা তাকে একজন থেরাপিস্টের কাছে নিয়ে যান। সেখানে তাকে পাঁচটি সেশন করানো হয়। এরপর জানা যায়, সেৎজারের একটি নতুন সমস্যা শুরু হয়েছে। সে 'অ্যাংজাইটি অ্য়ান্ড ডিসরাপটিভ মুড ডাইস্রেগুলেশন ডিসঅর্ডার'-এ ভুগতে শুরু করেছে।
সেৎজারের মায়ের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট চ্যাটবটটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হওয়া সত্ত্বেও সেটি বাচ্চাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। মেগানের দাবি, ওই চ্যাটবটের প্রভাবেই তাঁর ছেলে আত্মহত্যা করেছে।
মেগানের কথায়, 'এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমাদের পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছে। কিন্তু, আমি এটা নিয়ে সরব হতে চাই। যাতে বাকি পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, এই চ্যাটবট কতটা বিপজ্জনক।' সেৎজারের মায়ের দাবি, এআই প্রযুক্তির আসক্তিই তাঁর সন্তানকে তাঁর থেকে কেড়ে নিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, 'এই মৃত্যুর দায় ক্যারেক্টার.এআই ও তাদের প্রতিষ্ঠাতা গুগলকে নিতে হবে।'