লিফটের দরজায় দেহ আটকে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারাতে হল সদ্য মা হওয়া এক তরুণীকে। হাড় হিম করে দেওয়া এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের মেরঠের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনায় যাঁর প্রাণ গিয়েছে, সেই তরুণীর বয়স ২৮ বছর। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য সামনে এসেছে, সেই অনুসারে - মেরঠের ক্যাপিটল হাসপাতালের একটি লিফট হঠাৎ করেই হুড়মুড়িয়ে নীচে পড়ে যায়। সেই সময়েই সদ্য মা হওয়া ওই তরুণীর দেহ লিফটের দরজায় আটকে যায়। এই ঘটনায় হাসপাতালের দু'জন ওয়ার্ড বয়ও আহত হয়েছেন।
পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই হাসপাতাল 'সিল' করে দিয়েছে এবং সেখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের অন্যান্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, যে লিফটে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটি নাকি ১০ দিন আগেই 'সার্ভিসিং' করানো হয়েছিল! নিহত তরুণীর স্বামী একজন সেনা সদস্য।
এই ঘটনা জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতার পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগ, তাঁরা হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর করেন। তাতে অনেক মূল্যবান চিকিৎসা সামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়।
পুলিশ সুপার (শহর) আয়ুষ বিক্রম সিং জানিয়েছেন, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতার পরিবারের সদস্যরা। সেই অনুসারে, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক, প্রশাসক এবং অন্য কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, '১০ দিন আগেই ওই লিফটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়েছিল। যে সংস্থাকে দিয়ে সেই কাজ করানো হয়েছিল, সেখানকার কর্মী ও আধিকারিকদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।' পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত চলছে।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. অশোক কাটারিয়া ঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, মর্মান্তিক এই ঘটনায় নিহত তরুণীর নাম করিশ্মা। তিনি কিথোরে এলাকার বেহরোদা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। বৃহস্পতিবারই তাঁকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর স্বামী সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন।
ওই দিনই করিশ্মা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তারপর একজন ওয়ার্ড বয় এবং একজন নার্স করিশ্মাকে স্ট্রেচারে শুইয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে, সেই সময় সদ্যোজাত সন্তান করিশ্মার সঙ্গে ছিল না।
হাসপাতালের কর্মীরা করিশ্মাকে শোয়ানো অবস্থাতেই স্ট্রেচারটি লিফটের ভিতর ঢোকাচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে ওই লিফটটি হুড়মুড়িয়ে নীচে ভেঙে পড়ে! প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, লিফটের প্রধান যে বেল্টটি থাকে, সেটি ছিঁড়েই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য প্রযুক্তিগত ত্রুটিকেই দায়ী করা হচ্ছে।
ঘটনার সময়, করিশ্মার কাঁধ পর্যন্ত অংশ লিফটের দরজার বাইরে ছিল। কিন্তু, কাঁধের নীচ থেকে শরীরের বাকি অংশ ছিল লিফটের ভিতর। সেই অবস্থাতেই লিফট নীচে পড়ে যায়! লিফটের দরজা সেই অবস্থাতেই বন্ধ হয়ে যায়!
অভিযোগ উঠেছে, এই অবস্থায় করিশ্মাকে উদ্ধারের চেষ্টা করার বদলে হাসপাতালের কর্মীরা সেখান থেকে পালিয়ে যান! ঘটনার প্রায় আধঘণ্টা পর দমকলকর্মীরা সেখানে পৌঁছন। তাঁরা করিশ্মাকে টেনে বের করেন। কিন্তু, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে!
সঙ্গে সঙ্গে করিশ্মাকে নিকটবর্তী অন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, করিশ্মা আর বেঁচে নেই।
এরপরই ক্যাপিটল হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের সঙ্গে বিবাদে জড়ান করিশ্মার পরিবারের সদস্যরা। শুরু হয় ভাঙচুর। প্রাণ ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান সেখানকার বহু কর্মী ও আধিকারিক।