এক ঝগড়ুটে, মারমুখী প্রতিবেশী যুবক কীভাবে চোখের সামনেই তাঁর ছেলেকে খুন করেছে, সংবাদমাধ্যমকে নিজেই সেকথা জানিয়েছেন পঞ্জাবের মোহালিতে নিহত তরুণ বাঙালি বিজ্ঞানী অভিষেক স্বর্ণকারের মা মালতী স্বর্ণকার।
তাঁর দাবি, তাঁর ছেলের সঙ্গে প্রত্যেক দিন যেচে এসে ঝগড়া করত প্রতিবেশী যুবক মন্টি। অভিষেক রোজ তাঁর অফিস থেকে ফিরে বাড়ির সামনেই নিজের মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে রাখতেন। আর, ঠিক তারপরই মন্টি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এসে ঝামেলা করত। বস্তু, স্বর্ণকার পরিবারকে লাগাতার হেনস্থা করে যাচ্ছিল মন্টিরা। কিন্তু, তারপরও এ নিয়ে কখনও পুলিশে কোনও অভিযোগ জানাননি মালতীরা।
কিন্তু কেন? মালতীর বক্তব্য - তাঁরা মোহালিতে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। মন্টিরা স্থানীয় বাসিন্দা। তাই প্রতিবেশীদের সঙ্গে কোনও অশান্তি করতে চায়নি স্বর্ণকার পরিবার। কিন্তু, মন্টি বারবারই মারমুখী আচরণ করেছে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ঘটনার দিনও অফিস থেকে রাতে বাড়ি ফিরে বাড়ির সামনেই বাইক রেখে ভিতরে ঢুকে যান অভিষেক। এর কিছুক্ষণ পরই মন্টি ফের বাইরে বেরিয়ে এসে চেঁচাতে শুরু করে। অভিষেকের নাম ধরে ডাকতে থাকে।
অভিষেকের নাম ধরে মন্টি বলে, 'এখনই বাইক সরা এখান থেকে, না হলে আগুন জ্বালিয়ে দেব।' এর জবাবে অভিষেকের মা বলেন, 'তোমাদের সামনেই রয়েছে বাইক, দাও জ্বালিয়ে।' কিন্তু, তারপরও মন্টি চেঁচামিচি করতে থাকে। সমানে অভিষেককে হুমকি দিতে থাকে। এসব শুনে অভিষেকের বাবা নীচে নেমে যান।
তিনি মন্টিকে ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হয়নি। এতে অভিষেকও রেগে যান। বাবার পিছন পিছন তিনি বাইরে বেরিয়ে যান। অশান্তি এড়াতে বাইকে তিনি সরিয়ে রাখেন এবং তারপর মন্টিদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তারা যেখানে বাইক রাখতে বলছে, সেখানে বাইক রাখলে নানা সমস্যা রয়েছে। কিন্তু, মন্টি সেসবে পাত্তা দেয়নি। লাগাতার সে হুমকি, হুঁশিয়ারি দিতে থাকে।
এরপরই অভিষেক মন্টিকে বলেন, এভাবে লাগাতার হেনস্থা করা হলে তিনি মন্টিদের পরিবারের নামে অভিযোগ জানাতে বাধ্য হবেন। একথা শুনেই নাকি আরও মারমুখী হয়ে ওঠে মন্টি। সে অভিষেককে পালটা বলে, 'আমাদের নামে অভিযোগ জানাবি?' একথা বলেই অভিষেককে ধাক্কা মারতে শুরু করে মন্টি। তাতেই অভিষেক রাস্তায় পড়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মালতী জানিয়েছেন, প্রথম থেকেই মন্টি ও তার পরিবার তাঁদের হেনস্থা করছিল। অভিষেক যেখানে বাইক রাখতেন, সেটা মন্টিদের জায়গাও নয়। তাও সে এভাবে রোজ যেচে এসে উৎপাত করে যেত।
অন্যদিকে, অভিষেক ছিলেন মেধাবী ও কৃতি। তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএসইআর)-এর প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট ছিলেন। বাঙালি হলেও স্বর্ণকার পরিবার আদতে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের বাসিন্দা। মোহালিতে কাজ শুরুর অভিষেক আগে সুইৎজারল্যান্ডে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি আইআইএসইআর-এ যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে মোহালির সেক্টর ২৯-এ বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন তিনি।