মাংস ভক্ষণে এবং মদ্যপানে নষ্ট হবে নর্মদা নদীর পবিত্রতা! সেই কারণেই নদী তীরবর্তী বসত এলাকাগুলিতে মাংস খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। একই নির্দেশিকা কার্যকর করা হবে মদ্যপানের ক্ষেত্রেও। এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, বিজেপি পরিচালিত রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা তো দূর, উল্টে এই পদক্ষেপকে 'স্বাগত' জানিয়েছে জাতীয় কংগ্রেস। তাদের প্রস্তাব, উজ্জয়িনী শহর থেকেই মদ্যপানে নিষেধাজ্ঞার নয়া নিয়ম কার্যকর করা হোক।
প্রসঙ্গত, এত দিন পর্যন্ত নাগরিকদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বিজেপি কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করতে চাইলে কংগ্রেস তার তীব্র বিরোধিতা করত। কিন্তু, এবার তাদের অবস্থান 'ভিন্ন' হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে চর্চা শুরু হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিকদের এই বিষয়ে যথাযথ নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে নর্মদা তীরবর্তী এলাকাগুলিতে আর কোনও মদ ও মাংসের দোকান থাকবে না।
এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে মোহন যাদব বলেন, 'মা নর্মদার স্বরূপ ও আশীর্বাদ যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, তার জন্য রাজ্য সরকারের সবক'টি বিভাগ একত্রিতভাবে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে যে সমস্ত ধর্মীয় শহরগুলি রয়েছে, যেখানে মাংস ও মদের দোকান রয়েছে, আমরা চেষ্টা করব যাতে ওইসব ধর্মীয় শহরে মাংস ও মদের দোকানের উপর বিধিনিষেধ কার্যকর করা যায়। আমি আশা করছি, বৈঠকে যেসমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেই অনুসারে আবারও সমীক্ষা করা হবে। এই কাজ একদিনে হবে না। বরং, এ হল এমন এক প্রক্রিয়া, যা সর্বক্ষণই গতিশীল।'
এই প্রেক্ষাপটে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে কংগ্রেসের তরফে 'পবিত্র প্রয়াস' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জীতু পটওয়ারি এই প্রসঙ্গে বলেন, 'এটি অত্যন্ত পবিত্র ভাবনা। মুখ্যমন্ত্রী যদি এমন কোনও পদক্ষেপ করে থাকেন, তাহলে তা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বয়ং মহাকালের নগরীতে (উজ্জয়িনী) বসবাস করেন। তাই, সবার আগে তাঁর সেখানেই মদের উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা উচিত।'
এই প্রসঙ্গে জীতু আরও জানান, সম্প্রতি কংগ্রেসের পক্ষ থেকে উজ্জয়িনীতে একটি সভা করা হয়। এবং মুখ্যমন্ত্রীকে একটি প্রস্তাব পাঠিয়ে আবেদন করা হয়, সবার আগে রাজ্যের মধ্যে উজ্জয়িনীতেই মদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জানান, মুখ্যমন্ত্রী যদি এমনটা করেন, তাহলে তাঁরা তাঁকে নাগরিক অভিনন্দন জানাবেন।
উল্লেখ্য, এর ঠিক আগেই শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব। নর্মদা নদীর স্বচ্ছতা ও স্বাভাবিক ধারা বজায় রাখা-সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন কীভাবে করা যায়, বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হয় বলে দাবি সূত্রের।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাব দেন, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে নর্মদা ও তার আশপাশের এলাকায় ড্রোন ক্যামেরায় নজরদারি চালানোর পাশাপাশি উপগ্রহ দ্বারা ছবি তোলার উপরেও জোর দেওয়া হোক। একইসঙ্গে তাঁর প্রস্তাব ছিল, নর্মদা লাগোয়া ধর্মীয় শহরগুলিতে মদ ও মাংসের কেনাবেচা ও খাওয়াদাওয়ার উপরেও নিয়ন্ত্রণ জারি করা উচিত।
প্রসঙ্গত, নর্মদা নদীকে মধ্যপ্রদেশের জীবনরেখা বলা হয়। ভোপালে আয়োজিত সংশ্লিষ্ট বৈঠকে তাই এই নদীর স্বচ্ছতা ও পবিত্রতা রক্ষার উপর জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী মোদব যাদব।