মিস্টার মিজান
মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স মাত্র ৪ বছর। আমার পিতা শহিদ অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব। মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর হয়ে কাজ করেছিলেন। তাঁর জন্ম ১৯৪৩ সালে কোচবিহারের বামনহাটে। ১৯৮৭ সালে দেশভাগের তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন। আমার মতে দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণাটি ভুল ছিল। সেই ভুলের মাশুল গুনেছে বহু মানুষ। আমার বাবাও সেই বহু মানুষের একজন।
১৯৬৪ সালে তিনি ছাত্রজীবন শেষ করেন। এই সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনে নেমেছিলেন। তিনি পিস্তল-বন্দুক হাতে যুদ্ধ করতেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক দিকটি সামলাতেন। সেই কারণে পাকিস্তানীদের কাছে টার্গেট হয়েছিলেন বাবা। আমার বাবার কাজ ছিল জনগণকে স্বাধীনতার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা। তিনি মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক আর প্রগতিশীল ছিলেন।
হানাদারদের কাছে টার্গেট হওয়ার কারণে আশ্রয় নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটায়। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী কমল গুহর সহযোগিতায় তিনি বিজন বাবুর বাড়িতে একটি যুবশিবির করেছিলেন। এক সময় পরিবারের সবাই ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ভারত সরকারের রেশন পেতাম। ভারত পাশে থেকে সাহায্য না করলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না।
আমার এখন ৫৪ বছর বয়স। আমি মনে করি সেই সময় ইন্দিরা গান্ধীর বিচক্ষণতার কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছিল ৭ আগস্ট। তিনি কয়েকজনের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে পরামর্শ করছিলেন। সেই সময় পাক সেনারা হামলা করে। বাবা রেললাইন ধরে ছুটতে ছুটতে ভারতে প্রবেশ করে। কিন্তু পাক সেনারা তাঁকে ধরে ফেলে। নির্মম অত্যাচার করে তাঁকে হত্যা করা হয়।