দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশের পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অসংখ্যবার বিরোধী মতাবলম্বীদের গুম করে আটকে রাখা, বা গুম করে খুন করানোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে 'আয়না ঘর'-এর কথাও।
হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে এই সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই একটি বিশেষ কমিশন গঠন করে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪) বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সেই গুম কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে নানা কথা বলেন মহম্মদ ইউনুস।
তাঁর দাবি, 'গুম কমিশনের প্রতিবেদন লোমহর্ষক। মানুষ মানুষের প্রতি কী পরিমাণ নৃশংস হতে পারে, এতে আছে তার বিবরণ। অবিশ্বাস্য বর্ণনা!'
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পালাবদলের পর এটাই প্রথম বিজয় দিবস। এদিন, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়া শুরু করেন ইউনুস। তাঁর সেই বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে সম্প্রচার করা হয়।
এদিনের ভাষণে অসংখ্য বিষয় নিয়ে কথা বলেন মহম্মদ ইউনুস। তার মধ্য়ে গুম কমিশনের রিপোর্ট অন্যতম। তাঁর মতে, গুম কমিশনের রিপোর্ট এককথায় 'ভয়াবহ'। তিনি বলেন, 'সরকারের (হাসিনা জমানার) আক্রোশের শিকার হয়ে ঘটনাচক্রে যাঁরা এখনো বেঁচে আছেন, তাঁরা আজ পর্যন্ত মুখ খুলতে সাহস করছেন না। তাঁদের ভয় কিছুতেই কাটছে না। তাঁদের ভয়, হঠাৎ যদি ওই জালেমরা আবার ক্ষমতায় আসে, তাহলে তাঁদের প্রতি এরা নৃশংসতম হবে। গত সরকারের ঘৃণ্যতম অধ্যায়ের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে এই প্রতিবেদন অমর হয়ে থাকবে।'
বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়, হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে শুরু করে হাসিনার সমালোচক এবং বাংলাদেশের আমজনতার একাংশও মনে করেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত (যত দিন একটানা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন) - বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের শিকার হয়েছেন বিরোধীরা।
এই সময়সীমার মধ্যে যত গুমের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়, সেসবেরই তদন্ত করতে গত ২৭ অগস্ট গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। সেই কমিশনের নেতৃত্বে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে। গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের কাছে সেই কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা করেছে। যার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে - 'আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ'।
বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুসারে, সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে - গুমের ঘটনায় কমিশনের কাছে এখনও পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। যার মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগ যাচাই করা হয়েছে।
ওই রিপোর্টে নাকি আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে যত গুমের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রত্যেকটিতে আসল কলকাঠি নেড়েছেন পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমিশনের কাছে নাকি তার প্রমাণও রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।