বাংলাদেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ রাখার কোনও দরকার নেই। এমনই দাবি করলেন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের সংবিধানে যে পঞ্চদশ সংশোধনী (২০১১ সালের ৩ জুলাই গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল) আনা হয়েছিল, সেটার বিরোধিতা করে হাইকোর্টে যে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছে, সেই মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল দাবি করেন যে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। সেই পরিস্থিতিতে সংবিধানের অষ্টম অনুচ্ছেদে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ রাখার কোনও দরকার নেই। অতীতে আল্লাহের উপরে অবিচল আস্থার কথা বলা ছিল। এখনও সেই বিষয়টা ফিরিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল করেন মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাইকোর্টে শুনানির সময় অনুচ্ছেদ ২ (ক)-র কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি দেন যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হল ইসলাম। কিন্তু হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরাও যাতে নিজেদের ধর্ম পালন করতে পারেন এবং তাঁরাও যাতে সমানাধিকার পান, সেটা নিশ্চিত করার পক্ষেও সওয়াল করেন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল।
‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-র বিরোধিতায় অ্যাটর্নি জেনারেল
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সংবিধানে যে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-র কথা বলা আছে, সেটারও বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফর ডটকমের প্রতিবেদন অনুায়ী, অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন যে বাংলাদেশের সংবিধানের নয় নম্বর অনুচ্ছেদে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-র উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেই শব্দবন্ধের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অন্য ভাষার মানুষদের লড়াইকে সম্মান প্রদান করা হচ্ছে না।
অন্য ভাষার মানুষদের অবদান অস্বীকার করা যায় না, দাবি ইউনুস সরকারের
বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের যুক্তি, বাংলা ছাড়াও অন্য ভাষায় কথা বলা মানুষরা (চাকমার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের জীবনের পরোয়ানা করেননি। দিয়েছেন নিজেদের রক্ত। সংবিধানে শুধুমাত্র ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-র কথা হলে বাংলাদেশের জন্য সেই মানুষদের লড়াইয়ের প্রতি অসম্মান করা হবে। অস্বীকার করা হবে তাঁদের অবদানকে।
আরও পড়ুন: Bangladeshi Hindus: 'চট্টগ্রামে হিন্দুদের উপরে আক্রমণ সেনার, গণহত্যা শুরু?', বিস্ফোরক ব্যারিস্টার
‘জাতির পিতা’ সবকিছু একা করেননি, সওয়াল অ্যাটর্নি জেনারেলের
সেইসঙ্গে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অংশ নিয়েও আপত্তি তুলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি জানিয়েছেন যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যে সংবিধান তৈরি হয়েছিল, তাতে 'জাতির পিতা' ছিল না। সংবিধানের যে মূল ভাবধারা আছে, সেটা পরিপন্থী হল 'জাতির পিতা' ধারণা। বাংলাদেশে যে বঙ্গবন্ধুর অনেক অবদান আছে, তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু একজনই সবকিছু করেছেন, সেটা বলা হলে বাংলাদেশের সংবিধানের মূলধারায় আঘাত করা হয়।