ভয় পেয়ে নয়, মানুষের স্বার্থেই ক্ষমতা ছেড়ে দেন বলে দাবি করলেন শেখ হাসিনা। ব্রিটেনে আওয়ামি লিগের সমর্থকদের আয়োজিত সভায় ভার্চুয়ালি ভাষণে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, লাশের পরে লাশ ফেলে তিনি ক্ষমতায় থাকতে চাননি। তাই সরে এসেছিলেন। সেইসঙ্গে ‘মাস্টারমাইন্ড খুনি, ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার’ মহম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দাবি করেন, নির্বিচারে বাংলাদেশিদের খুন করা হচ্ছে। চালানো হচ্ছে লুটপাট। জঙ্গিদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে, হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন হাসিনা। আর যে ইউনুসের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করেন হাসিনা, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সেই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম দাবি করেছেন, হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করানো হবে। কয়েকটি আইনি প্রক্রিয়া বাকি আছে। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের আর্জি জানানো হবে। বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে গণহত্যা ও আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় হাসিনাকে আইনের মুখে দাঁড় করানো হবে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব।
গণহত্যা, টাকা পাচার- হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ইউনুসদের
রবিবার হাসিনার ভার্চুয়ালি ভাষণের মধ্যেই ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সাংবাদিক বৈঠকে শফিকুল দাবি করেন, হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। গত জুলাই ও অগস্টে বাংলাদেশে যে ১,৫০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার মূলে ছিলেন হাসিনা। যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে সাধারণ নাগরিকদের টাকা চুরি করে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে বিদেশে। সেইসব কারণে হাসিনাকে আইনের মুখে দাঁড় করাতে মরিয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
হাসিনাকে ফেরানোর আইনি প্রক্রিয়া চলছে, দাবি শফিকুলের
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে বাংলাদেশের। সেই চুক্তি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাউকে প্রত্যর্পণের জন্য আবেদন করা যায়। আপাতত সেই আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তারপরই ভারতের কাছে হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হবে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
হাসিনা কি সত্যিই ভারতে আছেন?
তবে হাসিনা ঠিক কোথায় আছেন, তা স্পষ্ট নয়। মাসকয়েক আগে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল যে স্বল্প নোটিশে গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা চলে এসেছিলেন। ভারতেই আছেন তিনি। তবে ঠিক কোথায় আছেন বা কতদিন থাকবেন, তা নিয়ে নয়াদিল্লির তরফে সেইসময় কিছু জানানো হয়নি। রবিবার হাসিনা যে ভার্চুয়ালি ভাষণ দিয়েছেন, তা ভারতে বসেই দিয়েছেন কিনা, সেটাও স্পষ্ট নয়।
'নয়া সূর্যোদয় হবে বাংলাদেশে', বললেন হাসিনা
তাঁর অজ্ঞাতবাসের অবস্থান স্পষ্ট না হলেও ভার্চুয়ালি ইউনুসকে তুলোধোনা করেছেন হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সব হত্যাকাণ্ডের জন্য এই মাস্টারমাইন্ডই দায়ি। কারণ তারাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। (লক্ষ্যটা ছিল) লাশ ফেলো, সরকার পড়ে যাবে। আমি যদি আরও শক্তিপ্রয়োগ করতাম, তাহলে আরও অনেক লাশ পড়ত। আমি সরে আসতাম না। কিন্তু আমি তো লাশের উপরে লাশ ফেলতে চাইনি। আমি তো চাইনি যে মানুষ জীবন দিক। আমি তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম যে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে।’ সেইসঙ্গে হাসিনা দাবি করেন, তিনি মানুষের জীবন নেননি। জীবন দিয়েছেন। আর তাই একদিন ঠিক বিচার হবেই। নয়া সূর্যোদয় হবে বাংলাদেশে।