আবার সেই 'চর্বিত চর্বণ'! তবে, এবার কৌশলে বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় আরও কয়েক মাস পিছিয়ে দিলেন কেয়ারটেকার সরকারের মাথায় বসে থাকা মহম্মদ ইউনুস। আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে আভাস দেওয়ার পাশাপাশি, তাঁর প্রশাসন যে রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সমস্ত সমস্যা সমূলে উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর, তেমনটা একটা বার্তা দেওয়ারও চেষ্টা করলেন তিনি।
পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুসারে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ পৌঁছে গিয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। শুক্রবার (১৪ মার্চ, ২০২৫) তিনি ঢাকার তেজগাঁওয়ে ইউনুসের কার্যালয়েই তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন।
সেই আলোচনায় খুব স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে, সেই প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়। জবাবে ফের একবার সেই 'পুরোনো কাসুন্দিই ঘাঁটেন' ইউনুস। নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এখন বাংলাদেশের যা পরিস্থিতি, তাতে অসংখ্য সংস্কার দরকার। এবং সেগুলি ভোটের আগেই করতে হবে। তাহলে ভোট কবে হবে?
সুকৌশলে সেই দায় রাজনৈতিক দলগুলির ঘাড়ে চাপিয়ে দেন ইউনুস। যেমনটা তিনি আগেও করেছেন। তাঁর বক্তব্য, রাজনৈতিক দলগুলি যদি ক্ষুদ্র পরিসরে সংস্কার সাধন করাতে চায়, তাহলে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই ভোট করানো যেতে পারে।
কিন্তু, রাজনৈতিক দলগুলি যদি ব্যাপক ও বিস্তৃত সংস্কার চায়, তাহলে ভোট হবে পরের বছর - অর্থাৎ - ২০২৬ সালের জুন মাসে!লক্ষ্যণীয় বিষয় হল - এর আগে এই সংস্কারের জিগির তুলেই ইউনুস কিন্তু বলেছিলেন - ভোট আগামী ডিসেম্বর মাস অথবা আগামী বছরের মার্চ মাস নাগাদ হতে পারে!
কিন্তু, রাষ্ট্রসংঘের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানকে তিনি জানালেন, ব্যাপক ও বিস্তৃত সংস্কারের ক্ষেত্রে ভোট হবে আগামী বছরের জুন মাসে! অর্থাৎ - পূর্ব অবস্থানের তুলনায় তা পিছিয়ে দেওয়া হল আরও তিনমাস! যার অর্থ হল - অন্তত ততদিন তিনি তাঁর গদি ছাড়ছেন না।
অন্যদিকে গুতেরেস জানিয়েছেন, তিনি আশা করছেন ইতিবাচক সংস্কার সাধনের পর বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবং দেশটির 'প্রকৃত রূপান্তর' ঘটবে। তাঁর এই মন্তব্য বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমগুলিই প্রকাশ করেছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য গুতেরেসকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন ইউনুস। তিনি বলেন, 'আপনার আসার সময়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার এই সফর শুধু রোহিঙ্গাদের জন্যই নয়, বাংলাদেশের জন্যও সময়োপযোগী।'
সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গুতেরেসকে তিনি জানান, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের প্রতি ইতিমধ্যেই প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। একবার রাজনৈতিক দলগুলি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলির বিষয়ে একমত হলেই তারা জুলাই চার্টারে সই করবে। যার মাধ্যমে রাজনৈতিক, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন, প্রশাসনিক, দুর্নীতিদমন ও পুলিশব্যবস্থার সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের একটি নীল নকশা তৈরি করা হবে।'
এরপরই ইউনুস বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলি ছোট পরিসরে সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে, বৃহত্তর পরিসরে সংস্কার চাইলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।'