বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর কি সরকারের আদৌ কোনও নিয়ন্ত্রণ আছে? বিগত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ জুড়ে যা সব চলছে, তাতে এই প্রশ্নই উঠে এসেছে। বাংলাদেশের স্বধীনতার পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশের বহু জায়গায় আওয়ামি লিগ নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে সেখানে অগ্নি সংযোগ করা হচ্ছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়িতেও আগুন লাগানো হয়। এই আবহে দেশের সকলকে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস আবেদন করলেন, শেখ হাসিনা বা তাঁর পরিবারের কারও সম্পত্তি যেন নষ্ট না করা হয়। এছাড়া আওয়ামি লিগের সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তির ওপরেও যাতে হামলা না চালানো হয়, তার জন্যে আহ্বান জানিয়েছেন ইউনুস।
ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে মহম্মদ ইউনুসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, 'শেখ হাসিনা বছরের পর বছর জনগণের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। সঙ্গত কারণেই বিক্ষোভকারীদের মনে ক্ষোভ রয়েছে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপরে। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়েও তার দলীয় সন্ত্রাসীদের একত্র করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। বছরের পর বছর বাংলাদেশে নিপীড়নের শাসন কায়েম করা শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের পুনর্নির্মাণকে ক্রমাগত বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। তা সত্ত্বেও সরকার দেশের সব নাগরিককে আইন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে। এতে করে আমরা নিজেদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।'
ইউনুসের কথায়, 'ফ্যাসিবাদী শাসনের অধীনে পুরোনো বাংলাদেশ থেকে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করছি, আইন মেনে চলার মধ্য দিয়েই সেটি আলাদা হবে। আসুন, আমরা বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার অনুভূতি ক্ষুণ্ন না করি; আইনের প্রতি যেকোনো অবজ্ঞা নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। আমাদের নিজেদের এবং বিশ্বজুড়ে আমাদের বন্ধুদের কাছে প্রমাণ করা অপরিহার্য যে আমরা একে অপরের নাগরিক ও মানবাধিকারকে সম্মান করব এবং আইন মেনে চলব। এই নীতির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার অটল। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের বিজয়ীদের নিশ্চয়ই এমন কিছু করা উচিত হবে না, যা দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং স্বৈরাচারী হাসিনার আমলের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।'
ইউনুসের বক্তব্য, 'যতক্ষণ আমরা সতর্ক থাকব এবং নিজেদের নীতি-নৈতিকতা বজায় রাখব, ততক্ষণ তাদের (শেখ হাসিনা এবং আওয়ামি লিগ নেতাদের) ফিরে আসার আর কোনও সুযোগ নেই। তাদের সম্পত্তিতে যেকোনও আক্রমণকে তারা আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করার এবং তাদের বানোয়াট গল্প প্রচার করার সুযোগ হিসেবে নেবে। সমগ্র বিশ্ব আমাদের সঙ্গে আছে। এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলার যেকোনো অবনতি বিশ্বকে ভুল বার্তা দেবে।'