'মানি হেইস্ট' দেখে অনুপ্রাণিত। আর তার পরেই নিজের ব্যাঙ্কের ভল্ট-ই ফাঁকা করে দিলেন এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ দেখেই নাকি ৩৪ কোটি টাকা চুরি করার অনুপ্রেরণা পান ICICI ব্যাঙ্কের ওই ক্যাশ ম্যানেজার। মহারাষ্ট্রের ডম্বিভিলির শাখার ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ডম্বিভিলির MIDC এলাকায় ICICI ব্যাঙ্কের এই শাখা। অভিযুক্ত আলতাফ শেখ ব্যাঙ্কের ক্যাশ কাস্টোডিয়ান সার্ভিসের ম্যানেজার ছিলেন। প্রায় এক বছর আগে, তিনি 'মানি হেইস্ট' নামের জনপ্রিয় অনলাইন সিরিজটি দেখেন। সেখান থেকেই রাতারাতি বড়লোক হওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের ভল্ট থেকে চুরি করার বুদ্ধি পান। মাসের পর মাস ভল্টের কোথা দিয়ে টাকা সরানো যায়, তা খুঁজে খুঁজে বের করেন। সেই মতো এক অভিনব পরিকল্পনাও ফেঁদে ফেলেন। ধীরে ধীরে প্রয়োজনীয় সমস্ত সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছিলেন।
কীভাবে হল বাস্তবের মানি হেইস্ট?
একদিন ব্যাঙ্কের সেফ রুমের পাশে এসি মেরামতের কাজ হচ্ছিল। সেদিনই নিজের কাজ হাসিল করেন। ভল্টের অন্দরে এসি ডাক্ট। তার গ্রিল খুলে ফেলেন। এরপর সেই গর্ত দিয়ে টাকা ফেলে দেন। কিন্তু তাহলে তো টাকা নিচে পড়ার কথা?
সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছিলেন। ব্যাঙ্কের বিল্ডিংয়ের পেছনে একটি ত্রিপল বাঁধা ছিল। টাকা গিয়ে পড়ে সেখানে। এরপর বাইরে বেরিয়ে সেই টাকা ব্যাগে ভরে হাওয়া হয়ে যান।
কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ?
ভল্টে এত টাকা, সিসিটিভি থাকাটাই তো স্বাভাবিক। সেই বিষয়েও ফন্দি আঁটেন তিনি। সিসিটিভির DVR-টাই গায়েব করে দেন। ফলে প্রমাণ করার কোনও সুযোগই রাখেননি।
উল্টে ভালোমানুষ সাজতে নিজেই কর্তৃপক্ষের কাছে চুরির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
কীভাবে ফাঁস হল মাস্টারপ্ল্যান?
পুলিশি তদন্ত চলাকালীন, ওই ব্যক্তি তাঁর তিন বন্ধু- কুরেশি, আহমেদ খান এবং অনুজ গিরিকে ফোন করেছিলেন। নিজের কাছে এত নগদ টাকা রাখা বিপদজনক। তাই তাঁদের কাছে প্রায় ১২ কোটি টাকা (মোট ৩৪ কোটির মধ্যে) দিয়ে দেন।
তদন্তের অংশ হিসাবে আলতাফ শেখের ফোনের কল রেকর্ড খতিয়ে দেখেন পুলিশকর্মীরা। আর তারপর ওই তিন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতেই পুরোটা ফাঁস হয়ে যায়। জেরায় টাকার কথা স্বীকার করে ফেলেন ওই তিনজন। তাঁদের কাছ থেকে মোট ৫ কোটি টাকা উদ্ধার হয়।
এদিকে বাকি ২২ কোটি টাকা নিয়ে হাওয়া হয়ে যান অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। তবে শেষরক্ষা হয়নি। ওই তিন বন্ধুকে জেরা করেই প্রায় আড়াই মাস পর পুনে থেকে ওই ব্যক্তিকে পাকড়াও করে পুলিশ। জেরায় মানি হেইস্ট দেখে তাঁর মাথায় এই চিন্তা আসে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে মাত্র ৯ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা সম্ভবত বন্ধু, পরিবারের সদস্যদের কাছে লুকিয়ে রাখা আছে। অভিযুক্তের বোন ও আরও ৫ সন্দেহভাজনকে আটক করেছে পুলিশ। টাকা উদ্ধারের জন্য জেরা করা হচ্ছে।