এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকির খুনের ঘটনায় আরও এক অভিযুক্তকে পাকড়াও করল মুম্বই পুলিশ। রবিবার পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, ওই ব্যক্তিকে পুণে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে এই ঘটনায় সব মিলিয়ে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল তিন।
বাবা সিদ্দিকি খুনে গ্রেফতার অন্যতম চক্রী:
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, ধৃত তৃতীয় ব্যক্তির নাম প্রবীণ লোঙ্কার। তবে, প্রবীণ নিজে হাতে গুলি চালিয়ে বাবা সিদ্দিকিকে খুন করেছে, এমনটা নয়।
পুলিশের দাবি, যারা বাবা সিদ্দিকিকে খুনের চক্রান্ত করেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম হল এই প্রবীণ। সেই হিসাবে তাকে এই ঘটনার অন্যতম চক্রী বলা যায়। প্রবীণ এবং তার সঙ্গে আরও কয়েকজন বাবা সিদ্দিকিকে খুন করার চক্রান্ত করেছিল বলে অভিযোগ। তারাই বাবা সিদ্দিকিকে মারতে তিন বন্দুকবাজকে নিয়োগ করেছিল।
ধৃত দুই বন্দুকবাজের পুলিশ হেফাজত:
অন্যদিকে, যে তিন যুবকের বিরুদ্ধে বাবা সিদ্দিকিকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠেছে, তাদের মধ্যে দু'জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ। ধৃতেরা হল গুরমেল সিং এবং ধর্মরাজ কাশ্যপ।
ধৃত এই দুই যুবককে ইতিমধ্যেই আদালতে পেশ করা হয়েছে। আদালত দুই অভিযুক্তকে আগামী ২১ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার আবেদন মঞ্জুর করেছে। এই ঘটনায় আরও এক আততায়ীর খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। শিবকুমার গৌতম নামে ওই যুবক ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা।
প্রাথমিক জেরায় গুরমেল এবং ধর্মরাজ পুলিশকে জানিয়েছে, বাবা সিদ্দিকিকে কে বা কারা খুনের পরিকল্পনা করেছে, তা তাদের জানা নেই। কারণ, যারা তাদের এই 'কাজের বরাত' দিয়েছিল, তারা সরাসরি কেবলমাত্র শিবকুমারের সঙ্গেই যোগাযোগ করত।
শেষ মুহূর্তে বদলে যায় হামলার ছক:
তদন্তের কাজ যেটুকু এগিয়েছে, তাতে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছিল, গুরমেল সিং এবং ধর্মরাজ কাশ্যপই বাবা সিদ্দিকিকে গুলি করবে। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনায় কিছু বদল আনা হয়। কারণ, বাবা সিদ্দিকিকে ঘিরে বহু মানুষের জমায়েত হয়েছিল। সেই জমায়েতে পুলিশের সংখ্যাও ছিল অনেক বেশি।
তাই শেষ মুহূর্তে ঠিক করা হয়, গুরমেল সিং এবং ধর্মরাজ কাশ্যপ নয়, বাবা সিদ্দিকিকে গুলি করবে শিবকুমার গৌতম। আর বাকি দু'জন তাকে সাহায্য করবে পালাতে। প্রয়োজনে পালানোর সুবিধা করে দিতে বাকি দুই বন্দুকবাজকেও শূন্যে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বাবা সিদ্দিকিকে লক্ষ্য করে মোট ছ'রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল শিবকুমার। তার মধ্যে দু'টি গুলি বাবা সিদ্দিকির শরীরে লাগে। ঘটনার পর তাঁকে লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন এবং জানান, বাবা সিদ্দিকির বুকে দু'টি গুলি লেগেছিল।
নিরাপত্তাকর্মীর চোখে 'পেপার স্প্রে' ছুড়ে পালায় তিন আততায়ী:
বাবা সিদ্দিকিকে খুনের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বাবা সিদ্দিকিকে খুব বেশি হলে ৩ ফুট দূরত্ব থেকে গুলি করা হয়।
ঘটনার সময় বাবা সিদ্দিকির সঙ্গে ছিলেন মাত্র একজন নিরাপত্তাকর্মী। কোনও কারণে অন্যজন সেদিন আগেভাগেই (শনিবার বিকেলে) ডিউটি শেষ করে চলে গিয়েছিলেন। অভিযোগ ছিল, বাবা সিদ্দিকিকে যখন গুলি করা হয়, তখন তাঁর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মী তাঁকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করেননি।
কিন্তু, পরবর্তীতে জানা যায়, হামলাকারীরা সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও আর একটি 'অস্ত্র' এনেছিল। তাদের সঙ্গে ছিল, পেপার স্প্রে। বাবা সিদ্দিকিকে গুলি করার আগেই তাঁর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মীর চোখে ওই পেপার স্প্রে দিয়ে হামলা করা হয়। ফলে, হামলাকারীদের আটকানোর কোনও সুযোগই পাননি তিনি।
ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) দত্তা নালাওয়াড়ে জানিয়েছেন, তিনবারের বিধায়ক তথা এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকির নিরাপত্তার জন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থা ছিল না। বস্তুত, বাবা সিদ্দিকি নিজেও কখনও অতিরিক্ত নিরাপত্তা চাননি, বা তাঁর প্রাণ সংশয় রয়েছে বলে কোনও অভিযোগ করেননি।
তাই, সাধারণ নিয়ম মেনেই তাঁর জন্য মোট তিনজন পুলিশকর্মীকে নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন করা হয়েছিল। এঁদের মধ্যে দু'জন দিনের বেলা তাঁর সঙ্গে থাকতেন। আর তৃতীয় জনের ডিউটি থাকত রাতে।