কক্সবাজারের মহেশখালীতে আলোচিত খাইরুল আমিন হত্যা মামলার অবশেষে রায় হয়েছে৷ ৩২ বছর পর রায় ঘোষণার দিনে দেখা গেল যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামি হাসছে৷ ১৯৯০ সালে মহেশখালীর বাজারে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন খাইরুল৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ফরিদুল আলম৷
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম, তার ভাই বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভি জহির উদ্দিন ও নাসির উদ্দিন, ছোট মহেশখালীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলম, আইনজীবী হামিদুল হক ও সাধন দাশ৷ রায় ঘোষণার সময় সাধন দাশ ছাড়া অপর পাঁচজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷ রায়ে সাজাপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশও দিয়েছেন আদালত৷
এছাড়া আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগভুক্ত ২০ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে৷ মামলার নথির বরাতে ফরিদুল ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিহত খাইরুল আমিন (২৮) মহেশখালী পৌরসভার গোরকঘাটা এলাকার মৃত হামজা মিয়া সিকদারের ছেলে৷ তিনি তৎকালীন জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন৷ ১৯৯০ সালের ৯ এপ্রিল বিকাল ৫টার দিকে মহেশখালীর গোরকঘাটা বাজারে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন খাইরুল৷
ওই দিন তার বড় ভাই মাহমুদুল করিম সিকদার বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুর বক্স, পুটিবিলার বাসিন্দা ও মহেশখালী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান সরওয়ার আজম, শামসুল আলম, নাসির উদ্দিন ও হামিদুল হক-সহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন৷ একই বছরের ২২ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনার তদন্ত করে এজাহারভুক্ত ২৫ জন-সহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন৷
এরপর ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত৷ মামলার যুক্তিতর্ক আদালতে উপস্থাপন হয়েছিল ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর৷ যুক্তিতর্ক শেষে চলতি ২০২২ সালের ২৬ মে আদালত রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের জন্য ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন৷ মামলার মোট আসামি ২৬ জনের মধ্যে সাত জন মারা গিয়েছেন৷ পলাতক ছিলেন দুইজন৷ দীর্ঘ বিচার কাজ শেষে বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত৷
পিপি ফরিদুল বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার কারাগার থেকে মামলার পাঁচ আসামিকে আদালতে আনা হয়৷ পরে সকাল ১১টায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন রায় পড়া শুরু করেন৷ দুপুর ২টায় ছয় জনের যাবজ্জীবন এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দিয়ে মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক৷ মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণের বরাতে পিপি ফরিদুল আলম বলেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির বিরোধের জেরে খাইরুল আমিন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে৷’’