মীরাটের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত যত এগোচ্ছে, তত যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। মার্চেন্ট নেভি অফিসার স্বামী সৌরভ রাজপুতকে খুন করতে নভেম্বর থেকে পরিকল্পনা করেছিলেন স্ত্রী মুসকান রাস্তোগি।কিন্তু কী ভাবে খুন করবেন, খুনের জন্য প্রেমিক সাহিলকে কী ভাবে রাজি করাবেন, তার কৌশল খুঁজতে থাকেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, মুসকান তাঁর প্রেমিককে বিশ্বাস করাতে চাইছিলেন যে, সৌরভের মৃত্যু দরকার। শুধু তাই নয়, সেই ধারণা তাঁর মধ্যে গেঁথে দেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যও নেন। (আরও পড়ুন: ISI কর্তাদের পরে বাংলাদেশ যাবেন পাক বিদেশমন্ত্রী, আলোচনা হবে প্রতিরক্ষা নিয়ে)
স্ন্যাপচ্যাটে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলেন মুসকান। সেখান থেকে প্রেমিক সাহিলকে মেসেজ করতে থাকেন। সৌরভকে খুন করা প্রয়োজন। সৌরভের মৃত্যু নিশ্চিত করতে হবে। এ রকম নানা ধরনের মেসেজ করতে থাকেন মুসকান। শুধু তাই নয়, এই ধারণাকে বিশ্বাসে বদলে দিতে সাহিলের মৃত মায়ের দোহাই দেওয়াও শুরু করেন। বছরখানেক আগেই সাহিলের মায়ের মৃত্যু হয়েছিল। মায়ের মৃত্যুতে মনমরা হয়ে থাকতেন সাহিল। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগান মুসকান। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সাহিলকে মুসকান বলেন, ‘তোমার মায়ের আত্মা চাইছেন সৌরভের মৃত্যু হওয়া উচিত। সে বারবার সেই সঙ্কেতই দিতে চাইছেন তোমাকে।’ এই ধরনের কথোপকথনের মাধ্যমে সৌরভকে খুনের জন্য সাহিলের ভরসা অর্জন করেন মুসকান। সৌরভ মার্চেন্ট নেভি অফিসার নন, লন্ডনে একটি বেকারিতে কাজ করেন, এ কথাও সাহিলকে বলেছিলেন তিনি। সৌরভকে সরাতে পারলে তাঁদের জীবনে আর কোনও বাধা থাকবে না বলেও সাহিলকে প্ররোচিত করেন বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। (আরও পড়ুন: আওয়ামি লিগ ‘আবার ফিরছে’, ঢাকায় বসেই হাসিনার দল নিয়ে বড় কথা খোদ ইউনুসের)
আরও পড়ুন: ইউনুসের বক্তব্যে না-খুশ, রাত ২টোয় উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ফিরল অগস্টের স্মৃতি
সাহিলের ভরসা অর্জনের পরই শুরু হয় সৌরভকে খুন করার পরিকল্পনা। বাজার থেকে মাংস কাটার ছুরি নিয়ে আসেন দু’জনে মিলে। সৌরভ আসার মাত্র কয়েকদিন আগে উদ্বেগ ও অনিদ্রায় ভোগার অছিলায় ডাক্তারের কাছে যান ও প্রেসক্রিপশনে ঘুমের ওষুধ লিখিয়ে নেন। ২২০ লিটারের একটি জলের ড্রাম, ৫০ কেজি সিমেন্টও কিনে নিয়ে আসেন। ৪ মার্চ সৌরভ একমাত্র কন্যার ৬ বছরের জন্মদিন উপলক্ষে লন্ডন থেকে বাড়িতে এসেছিলেন। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া সারেন। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সৌরভের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন মুসকান। এর আগেও যখন বাড়িতে এসেছিলেন নভেম্বরে, তখনও সৌরভের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিলেন স্ত্রী মুসকান। কিন্তু গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলেও অচৈতন্য হয়ে না পড়ায় খুনের পরিকল্পনা তখন ভেস্তে গিয়েছিল। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছিলেন বলে ধারণা তদন্তকারীদের। এবার ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেন। সেই খাবার খেয়ে সৌরভ অচৈতন্য হয়ে পড়েন। অচৈতন্য হতেই সৌরভের বুকে একের পর এক ছুরির কোপ বসিয়ে দিয়েছিলেন মুসকান। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হন সাহিল। বাজার থেকে কিনে আনা মাংস কাটার ছুরি দিয়ে সৌরভের মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দেন সাহিল। রাতেই সৌরভের দেহ টুকরো করেন দু’জনে মিলে। তারপর নীল ড্রামের মধ্যে সিমেন্ট ঢালেন। আবার সিমেন্ট গুলে ড্রামের মুখ আটকে দেন, যাতে দেহাংশের কোনও চিহ্নই কেউ খুঁজে না পান। সেই ড্রামটিকে ফেলে আসার পরিকল্পনা ছিল দু’জনের। সন্দেহ যাতে না হয়, তাই দু’জনে মিলে আগে হিমাচল প্রদেশে ঘুরতে চলে যান। সেখান থেকে সোমবার বাড়িতে ফিরে ওই ড্রাম ফেলে আসার পরিকল্পনা ছিল মুসকান এবং সাহিলের। কিন্তু তার আগেই ধরা পড়ে যান তাঁরা।