‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান’। কাজী নজরুল ইসলামের এই কবিতা (গান) বারবার মনে করায় ভারতের সার্বভৌমতা ও অখণ্ডতাকে। বারবার বুঝিয়ে দেয় যে আমাদের দেশ এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ ‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহানের’। আর তেমনই ঘটনার সাক্ষী আজ আমাদের দেশ। এদিকে যখন অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে গোটা বিশ্বের হিন্দুদের আনন্দ উদযাপন চলছে। অপরদিকে, সেই রামের জন্মভূমিতে একজন মুসলিম মহিলা জন্ম দেয় তাঁর সন্তানের। আর সেই নবজাতক সন্তানের নাম তিনি রেখেছেন ‘রাম রহিম’। কিন্তু কারণ কী? কারণ আবেগতাড়িত এই ঘটনা ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
মহিলার নাম রেখা বেগম। তিনি অযোধ্যারই বাসিন্দা। তিনি বলেন, রাম মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার খবর শুনে তিনি খুবই আনন্দিত হয়েছেন। তিনি বলেন, এই মন্দিরটি ভারতের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক এবং তিনি চেয়েছিলেন তার ছেলে এই ঐতিহ্যের একটি অংশ হোক। রেখা বেগমের স্বামী আনসার হোসেন জানান, তিনি তার স্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ধর্মের চেয়ে মানবতা বড় এবং তারা চান তাদের ছেলে যেন সকল ধর্মের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।
পাশাপাশি, ফিরোজাবাদের জেলা মহিলা হাসপাতালের ইনচার্জ ডাঃ নবীন জৈন জানিয়েছেন শিশু এবং মা দুজনেই ভাল আছেন। বাচ্চাটির ঠাকুমা বাচ্চাটির নামকরণ করেন বলে পরিবার সূত্রে খবর। অন্যদিকে, রেখা বেগমের এই সিদ্ধান্তটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই ঘটনাটি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার একটি দৃষ্টান্ত।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাম মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে এক আবেগী ভাষণে বলেন, এই দিনটি ভারতের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। তিনি বলেন, রাম মন্দির নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছেন কোটি কোটি মানুষ। তাদের স্বপ্ন আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। রাম মন্দির শুধুমাত্র একটি মন্দির নয়, এটি ভারতের সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনের প্রতীক। তিনি আশা করেন, এই মন্দির ভারতের মানুষকে আরও একताबদ্ধ করবে। রাম মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানটি ছিল ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই অনুষ্ঠানে রেখা বেগমের মতো ঘটনাগুলো দেখিয়েছে যে, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এখনও ভারতে জীবিত।
মন্দিরে পুজোর পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ যুগের প্রতীক্ষার পর আমাদের রাম এসে গিয়েছেন। বহু দিনের ধৈর্য ও তপস্যার ফল এটি। অগণিত বলিদান শেষে তিনি বিরাজমান হয়েছেন নিজ গৃহে।’ প্রাণ প্রতিষ্ঠার মুহূর্তে তিনি শিরোহিত হয়েছেন। এ কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন, 'অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু, গলা ধরা আসছে। শরীরে এখনও শিহরোন অনুভব করছি। ওই পবিত্র মুহূর্তেই পড়ে রয়েছে আমার মন। আমাদের রামলালা আর সেই তাঁবুতে থাকবেন না। আমাদের রামলালা এবার নবনির্মিত মন্দিরে থাকবেন। অপার শ্রদ্ধার সঙ্গে বলছি, এখন আমার যা অনুভূতি হল, তা দেশ-বিদেশের কোনায় কোনায় রাম ভক্তদের একইরকম উত্তেজনা হচ্ছে। এই মুহূর্ত অলৌকিক, পবিত্র, এই বাতাবরণ, এই সময় প্রভু শ্রীরামের আমাদের সকলের মাথায় আশীর্বাদ করেছেন।'
ঐতিহাসিক মুহূর্তের কথা সকলকে স্মরণ করিয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেন, '২২ জানুয়ারি, ২০২৪ সালের সূর্য এক অদ্ভূত আভা নিয়ে এসেছে। এই দিনটি ক্যালেন্ডারে লেখা কেবলমাত্র একটি তারিখ নয়, একটি নয়া কালচক্রের শুভারম্ভ। রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর পর থেকে প্রতিদিন, গোটা দেশে উৎসাহ বাড়তে শুরু করেছিল। নির্মাণকাজ দেখে দেশবাসী প্রতিদিন একটু একটু করে নতুন বিশ্বাস নিয়েছিলেন। সেই ধৈর্যের ফসল শ্রীরামের এই মন্দির। বন্দিদশা ভেঙে উঠে দাঁড়িয়েছি আমরা। অতীতের সেই সময় থেকে সাহস পেয়েছি আমরা। নতুন ইতিহাসের সৃজন হয়েছে। হাজার বছর পরও মানুষ এই তারিখের চর্চা করবেন।'