জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরির বাধাল গ্রামে এক অজানা অসুস্থতা ঘিরে ক্রমেই রহস্য বাড়ছে। গত ৭ ডিসেম্বর থেকে ওই গ্রামে ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জম্মুতে স্থানীয় এসএমজিএস হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে এক শিশু। তারর অবস্থা আশঙ্কাজনক। কী ঘটেছে রাজৌরির এই এলাকায়? কোনও সংক্রমিত রোগ কি ছড়াচ্ছে? এক ঝাঁক প্রশ্ন রয়েছে বাধালের গ্রামে পর পর মৃত্যু ঘিরে।
এই রহস্যময় অসুস্থতার প্রথম ঘটনাটি ঘটে গত ৭ ডিসেম্বর। সেদিন একটি পরিবারের ৭ জন খাওয়া দাওয়ার পর অসুস্থ হন, তাঁদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়। খাওয়া দাওয়া চলছিল একটি গোষ্ঠীমূলক জমায়েতে। এরপরের ঘটনা ১২ ডিসেম্বরের। সেদিন ৯ জনের এক পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হন। মৃত্যু হয় ৩ জনের। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে গত ১২ জানুয়ারি। একই পরিবারের ১০ জন অসুস্থ হন। ৬ শিশুকে ভর্তি করতে হয় হাসপাতালে, তাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, সিএসআইআর-আইআইটিআর-র ‘টক্সিকোলজিক্যাল’ বিশ্লেষণ বলছে, একাধিক নমুনায় বিষক্রিয়ার হদিশ মিলেছে।
এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তদন্ত এবং নমুনা পরীক্ষামূলকভাবে ইঙ্গিত করে যে ঘটনাগুলি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল উত্সের একটি সংক্রামক রোগের কারণে নয় এবং জনস্বাস্থ্যের কোনও দৃষ্টিকোণ নেই। প্রাসঙ্গিকভাবে, সমস্ত নমুনা কোনও ভাইরাল বা ব্যাকটিরিওলজিকাল ইটিওলজির ক্ষেত্রেও নেগেটিভ হিসাবে এসেছে।’ এরই সঙ্গে ওই সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে,'দেশের কিছু নামি ল্যাবে বিভিন্ন নমুনার উপর পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি পুনে, ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল নিউ দিল্লি, লখনউর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টক্সিকোলজি অ্যান্ড রিসার্চ, ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট গোয়ালিয়র, পিজিআইএমইআর চণ্ডীগড়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ ছাড়াও আইসিএমআর-ভাইরাস রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি, জিএমসি, জম্মু।'
এই ঘটনার পরই জম্মু ও কাশ্মীরের স্বাস্থ্য মন্ত্রী সকিনা ইট্টু ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান। জেলা স্বাস্থ্যদফতর থেকে শুরু করে একাধিক অফিসার সেখানে যান। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যসচিব অটল ডাল্লুও বিষয়টি নিয়ে পর পর বৈঠক ডাকেন। মৃত্যুর কারণগুলি বোঝার জন্য দেশের কয়েকটি নামী প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের সেখানে আনা হচ্ছে। ৭ ডিসেম্বর প্রথম ঘটনার পরপরই সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে একটি মেডিকেল টিম পাঠানো, খাদ্য ও পানির নমুনা সংগ্রহ, মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন, মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট স্থাপন, ঘরে ঘরে স্ক্রিনিং এবং দ্রুত ব়্যাপিড অ্যাকশন টিম মোতায়েন করা। ইতিমধ্যেই সেখানে বেশ কিছু ল্যাব রিপোর্ট এসেছে। দেখা যাচ্ছে, সিএসআইআর-আইআইটিআর-র ‘টক্সিকোলজিক্যাল’ বিশ্লেষণ বলছে, একাধিক জৈবিক নমুনায় বিষক্রিয়ার হদিশ মিলেছে। ইতিমধ্যেই এই মৃত্যু গুলি ঘিরে তদন্তে সিট গঠন করেছে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ। তারা বিষয়গুলির তদন্ত করে দেখবে।