ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চলা মামলার শুনানির আবহে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। এদিকে দলের অপর এক সাংসদ দীনেশ শর্মাও বিচার ব্যবস্থার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই আবহে কংগ্রেস সহ বিরোধীরা তোপ দেগেছিল গেরুয়া শিবিরের দিকে। এহেন পরিস্থিতিতে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা একটি বিবৃতি প্রকাশ করলেন। তাতে তিনি স্পষ্ট করে জানালেন, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সাংসদদের বিতর্কিত মন্তব্যের সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। এরই সঙ্গে তিনি বলেন, বিজেপি চিরকাল বিচার ব্যবস্থাকে সম্মান জানিয়ে এসেছে। পাশাপাশি দলের কোনও সাংসদকেই বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এহেন বিরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে ১৯ এপ্রিল বার্তাসংস্থা এএনআইকে নিশিকান্ত দুবে বলেছিলেন, 'দেশে ধর্মীয় যুদ্ধ উস্কে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট দায়ী। সুপ্রিম কোর্ট তার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যদি সবকিছুর জন্য সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়, তাহলে সংসদ এবং রাজ্যের বিধানসভাগুলি বন্ধ করে দেওয়া উচিত।' এরই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টকে তোপ দেগে তিনি আরও বলেছিলেন, 'নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে আপনি কীভাবে নির্দেশনা দিতে পারেন? রাষ্ট্রপতি ভারতের প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করেন। সংসদ এই দেশের আইন প্রণয়ন করে। আপনি কি সেই সংসদকে নির্দেশ দেবেন?... আপনি কীভাবে একটি নতুন আইন তৈরি করছেন? কোন আইনে লেখা আছে যে রাষ্ট্রপতিকে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে? এর মানে হল আপনি এই দেশকে অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে চান। যখন সংসদ বসবে, তখন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।' এদিকে বিজেপির অপর সাংসদ দীনেশ শর্মা আবার বলেন, 'লোকসভা ও রাজ্যসভাকে নির্দেশনা দেওয়ার এক্তিয়ার নেই কারও।'
এই আবহে জেপি নড্ডা নিজের বিবৃতিতে বলেন, 'ভারতীয় জনতা পার্টি সর্বদা বিচার বিভাগকে সম্মান করে এসেছে এবং সবসময়ই বিচার ব্যবস্থার আদেশ ও পরামর্শ গ্রহণ করে দল। কারণ একটি দল হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে সুপ্রিম কোর্ট সহ দেশের সমস্ত আদালত আমাদের গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সংবিধানের সুরক্ষার শক্তিশালী স্তম্ভ। আমি তাদের দুজনকেই (নিশিকান্ত দুবে এবং দীনেশ শর্মা) এবং অন্য সকলকে এই ধরনের বক্তব্য না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।'
উল্লেখ্য, ওয়াকফ আইনের সাম্প্রতিক সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বেশ কয়েকটি আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে। তাতে আবেদনকারীরা বলছেন যে এই সংশোধিত আইনে 'ওয়াকফ বাই ইউজার'-এর মতো ধারা এবং ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্তির বিধান সংবিধানের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে। শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুপ্রিম কোর্ট আশ্বাস চেয়েছিল যে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত ওয়াকফ বোর্ড বা কাউন্সিলে কোনও অমুসলিম নিয়োগ করা হবে না এবং ইতিমধ্যে বিজ্ঞাপিত ওয়াকফ সম্পত্তির বিষয়ে কোনও অমুসলিম নিয়োগ করা হবে না। পাশাপাশি জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই সম্পত্তির মর্যাদার কোনও পরিবর্তন না করতে। এদিকে সরকারকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক জবাব এবং সম্পর্কিত নথি দাখিল করতে বলেছে শীর্ষ আদালত। এই নিয়ে বিজেপির একাংশ খুবই ক্ষুব্ধ। এমনকী উপরাষ্ট্রপতি জগদপ ধনখরকেও বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তোপ দাগতে দেখা গিয়েছিল সম্প্রতি।