গত ১৭ মার্চ মহারাষ্ট্রের নাগপুরে যে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই ঘটনার মূলচক্রী বলে যাঁকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, সেই ফাহিম খানের দোতলা বাড়িটি বুলডোজার চালিয়ে ইতিমধ্যেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, ওই বাড়ি নাকি বেআইনিভাবে তৈরি করা হয়েছিল। স্থানীয় পুর কর্তৃপক্ষের তরফে এই কাজ করা হয়েছে সোমবার (২৪ মার্চ, ২০২৫)। আর সেই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, সোমবার সন্ধেয় এ নিয়ে স্থগিতাদেশ জারি করল বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ।
সেই স্থগিতাদেশে বলা হয়েছে, ফাহিম খানের বাড়িতে আর কোনও ধরনের ভাঙচুর চালাতে পারবে না পুর কর্তৃপক্ষ। যদিও তথ্য বলছে, এই স্থগিতাদেশ জারি হওয়ার আগেই ফাহিম খানের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আদালত এই ঘটনায় পুর কর্তৃপক্ষের কাছে কৈফিয়তও তলব করেছে। নাগপুর পুরনিগমের নগরোন্নয়ন সচিব এবং কমিশনারের কাছে এই পদক্ষেপের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে, আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে তাঁদের এই জবাব জানিয়ে দিতে হবে।
ফাহিম খানের বাড়িতে আর কোনও ভাঙচুর না করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি বম্বে হাইকোর্ট আরও একজনের বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রেও স্থগিতাদেশ জারি করেছে। নাগপুর হিংসার ঘটনায় আরও এক অভিযুক্ত আবদুল হাফিজের বাড়ির উপরেও যাতে বুলডোজার চালানো বা এই ধরনের কোনও ঘটনা না ঘটানো হয়, তার জন্যই বম্বে হাইকোর্টে এই স্থগিতাদেশ জারি করেছে এবং পুর কর্তৃপক্ষে কঠোরভাবে এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনে চলতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আবদুল হাফিজের ক্ষেত্রেও বম্বে হাইকোর্টকে এই রায় দিতে হয়েছে, কারণ - তাঁর বাড়ির সামনেও আর্থ মুভার (জেসিবি) নিয়ে হাজির হয়ে গিয়েছিল পুর প্রতিনিধিদল ও পুলিশ। হাফিজের বাড়ি গান্ধী গেটের কাছে। এক্ষেত্রেও একই অভিযোগ সামনে রেখেছিল পুর কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি ছিল, ওই বাড়ি নাকি বেআইনি। তাই, বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছিল তারা।
এই অবস্থায় আদালতের দ্বারস্থ হন ফাহিম খানের আইনজীবী অশ্বীন ইঙ্গোলে। ফাহিম খান এবং আবদুল হাফিজের মধ্যে কারও বাড়িই যাতে পুর কর্তৃপক্ষ ভেঙে গুঁড়িয়ে না দেয়, সেই দাবি উত্থাপন করে আদালতের হস্তক্ষেপ চান তিনি। তাঁর যুক্তি ছিল, 'বুলডোজার জাস্টিস' নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশের শীর্ষ আদালত কিছু নির্দেশ জারি করেছে। কিন্তু, নাগপুর পুর কর্তৃপক্ষ তা লঙ্ঘন করেছে। যা আদতে আদালত অবমাননা ছাড়া কিছুই নয়। একইসঙ্গে, ফায়িম খানের সম্পত্তির ক্ষতি করার জন্য পুর কর্তৃপক্ষ যাতে তাঁকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়, সেই দাবিও করেন আইনজীবী ইঙ্গোলে। এরপরই আদালত এ নিয়ে স্থগিতাদেশ জারি করে।
প্রসঙ্গত, ফাহিম খানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আগেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, নাগরপুর হিংসার জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের কাছ থেকে সরকারি সম্পত্তি নষ্টের ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে এবং প্রয়োজনে বুলডোজারও চলবে!