ঔরঙ্গজেবের সমাধি নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ানোর জেরে হিংসা মহারাষ্ট্রের নাগপুরে। অভিযোগ, এই ভুয়ো খবর ঘিরে উত্তেজনা ছড়াতে একটি ধর্মগ্রন্থ পোড়ানো হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যার জেরে এক সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে চোট লাগে। জানা যায়, ১৭ মার্চ নাগপুরের মহল এলাকায় পাথর ছোড়া ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপরই নাগপুর পুলিশ শহরে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। হিংসায় জখম হয়েছেন ২৫ পুলিশকর্মী। সঙ্গে জখম হন ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরাও। এই পর্যন্ত হিংসায় জড়িত থাকা সন্দেহে ২০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে নাগপুরে। অপরাধীদের শনাক্ত করতে পুলিশ আধিকারিকরা সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য ভিডিয়ো ক্লিপগুলি স্ক্যান করছেন। এই ঘটনায় এফআইআর নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। নাগপুরে শহরে শান্তি বজায় রাখতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহযোগিতা করার জন্যও পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণকে আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে নাগপুরের পুলিশ কমিশনার ডাঃ রবীন্দ্র সিঙ্ঘল বলেছেন, 'আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। একটি ধর্মগ্রন্থ পোড়ানো হয়েছিল যার পরে লোকেরা জড়ো হয়েছিল এবং পরে হিংসা ছড়ায়। আমরা খবর পেয়েই হিংসা থামাতে ব্যবস্থা নিয়েছি। একটি প্রতিনিধি দলও আমার সাথে দেখা করতে আমার অফিসে এসেছিল। আমরা এফআইআর নথিভুক্ত করেছি। ঘটনাটি ঘটেছে রাত সাড়ে ৮টার দিকে। দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ।' সংবাদ সংস্থা এএনআই বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ করেছে যেখানে পুলিশ আধিকারিকদের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়।
এদিকে নাগপুর হল মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীসের নিজের শহর। এই আবহে রাজ্যবাসীর কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। একই বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকড়ি। এদিকে এই হিংসা প্রসঙ্গে ফড়নবীস বলেন, 'নাগপুরের মহল এলাকায় যেভাবে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরও ছোড়ে। এটা ভুল। আমি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যা যা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার পুলিশ কমিশনারকে তা নিতে বলেছি। যদি কেউ দাঙ্গা করে বা পুলিশের দিকে পাথর ছোড়ে বা সমাজে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তবে এই সমস্ত লোকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমি সকলের কাছে আবেদন করছি নাগপুরের শান্তি বিঘ্নিত হতে দেবেন না। কেউ উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
নাগপুরে আসলে কী হয়েছিল?
জানা যায়, ঔরঙ্গজেবের কবর অপসারণের দাবিতে একটি ডানপন্থী সংগঠন বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল নাগপুরে। সেই সময় মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থ পোড়ানো হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মহারাষ্ট্রের নাগপুরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। পরে হিংসা থামাতে গিয়ে ২৫ জন পুলিশকর্মী জখম হন। সঙ্গে জখম হন ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরাও। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মধ্য নাগপুরের চিটনিস পার্ক ও মহল এলাকায় উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিকেলে কোতোয়ালি ও গণেশপেঠে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, চিটনিস পার্ক থেকে শুক্রবার তালাও রোড পর্যন্ত এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে দাঙ্গাকারীরা কয়েকটি চার চাকার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর লক্ষ্য করেও পাথর ছোড়া হয় বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। এরপর হাজার হাজার মানুষের ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে অনেক চেষ্টা করতে হয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিকেলে মহল এলাকায় ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের মূর্তির কাছে বজরং দলের সদস্যরা বিক্ষোভ দেখালে ঝামেলা শুরু হয়। পুলিশ জানায়, আন্দোলন চলাকালে কোরান পোড়ানো হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়। পুলিশ সূত্রে খবর, বজরং দলের বিক্ষোভের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেলে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, সন্ধ্যায় গণেশপেঠ থানায় পবিত্র বই পোড়ানোর অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে মহল, কোতোয়ালি, গণেশপেঠ, চিটনিস পার্ক-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন মুসলিম সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। গোলমাল আঁচ করতে পেরে পুলিশ টহল জোরদার করে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী ডেকে আনে। এদিকে, চিটনিস পার্ক ও মহল এলাকায় পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়, এরপরই পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। অন্যান্য এলাকা থেকেও সহিংসতার খবর আসতে শুরু করে। বজরং দলের কর্মীরা অবশ্য কোরান পোড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন যে তারা তাদের প্রতিবাদের অংশ হিসাবে কেবল ঔরঙ্গজেবের একটি কুশপুতুল পোড়িয়েছেন।