বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই কট্টরপন্থী ও জঙ্গিবাদের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে বলে নানা মহলের অভিযোগ। যদিও প্রথম থেকেই সেই সমস্ত দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন কেয়ারটেকার সরকার। কিছু দিন আগে পর্যন্ত সেই সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন ছাত্র ও যুব নেতা নাহিদ ইসলাম।
এখন অবশ্য তিনি আর ওই পদে নেই। বদলে বাংলাদেশের নবনির্বাচিত রাজনৈতিক দল - জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)-এর অন্যতম প্রধান নেতা তথা আহ্বায়ক হয়েছেন।
এর মধ্য়েই বাংলাদেশে নারী নির্যাতন এমন একটা চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে যে বিএনপি থেকে শুরু করে বিশিষ্ট জনেরা, এমনকী খোদ মহম্মদ ইউনুসকে পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হয়েছে। আর, এই প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক শ্রেণি এবং অবশ্যই বর্তমান কেয়ারটেকার সরকারের সদস্যরা বাংলাদেশের বর্তমান অরাজকতা নিয়ে একটি বিশেষ 'ন্যারেটিভ' প্রচার করতে শুরু করেছে।
তাদের বক্তব্য, বিশ্বের বাকি কিছু দেশ নাকি ইসলাম নিয়ে অপপ্রচার করার অপচেষ্টা করছে, এবং বাংলাদেশকে একটি কট্টরপন্থী রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে। ইতিমধ্যেই একাধিক রাজনীতিক ও ইউনুসপন্থীর মুখে এই ধরনের মন্তব্য শোনা গিয়েছে। এবার ইফতার পার্টির অনুষ্ঠানে এসেও সেই একই কথা আউড়ে গেলেন সদ্য মূল ধারার রাজনীতিতে পা দেওয়া নাহিদ ইসলাম।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ, ২০২৫) ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত একটি ইফতার পার্টিতে অংশ নেন তিনি। যার আয়োজক ছিল তাঁর দল এনসিপি। সেই পার্টিতে আমন্ত্রিত ছিলেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, অভ্যাগতদের উপস্থিতিতেই নাহিদ বলেন, 'কিছু গোষ্ঠী বাংলাদেশ ও ইসলাম ধর্মকে নেতিবাচকভাবে বিশ্বে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে।'
কিন্তু, লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, তথাকথিত 'কিছু গোষ্ঠী'কে কাঠগড়ায় তুললেও বাংলাদেশে যে উগ্রপন্থা মাথাচাড়া দিচ্ছে না, সেটা কিন্তু জোর গলায় বলতে পারেনি তিনি। বরং তিনি বলেছেন, 'সন্ত্রাস ও উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান দেখাতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে। সামাজিক ও রাজনৈতিক জায়গা থেকেও আমাদের সেই অবস্থান দেখাতে হবে। ইসলামের যে অহিংস ও সহানুভূতিশীল মূল্যবোধের চর্চা রয়েছে, যা সাম্য, ইনসাফ ও সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়, সেই চর্চা ও শিক্ষা আমাদের সমাজে নিয়ে আসতে হবে।'
এই অনুষ্ঠানে ফের একবার গত বছরের জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের ভূয়সী প্রশংসাও করেন নাহিদ। তাঁর দাবি, 'জুলাইয়ের আন্দোলনে আমাদের নতুন বাংলাদেশের ঐক্য ও মিলনের জায়গা তৈরি হয়েছে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের মধ্যে নতুন করে জাগ্রত হয়েছে। আমাদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য হতে পারে, নীতিগত বিরোধ হতে পারে, তর্কবিতর্ক হতে পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক সম্পর্ক, সংলাপ ও মিথস্ক্রিয়ায় যাতে কোনও ছেদ না পড়ে।'
এবং অন্য়ান্যবারের মতো আরও একবার নাহিদ বলেন, বাংলাদেশে ভোট হওয়ার আগে সংস্কারের কাজ শেষ করতে হবে। অর্থাৎ, ফের একবার ভোট যতটা সম্ভব দেরিতে করানোরই বার্তা দিয়েছেন তিনি।