Forbes' Asia's Power Businesswomen 2022: সুযোগ ও সমর্থন। এটুকু পেলে মহিলারা ব্যবসার ক্ষেত্রে ইতিহাস গড়তে পারেন। তারই প্রমাণ করেছেন এই মহিলারা। আর সেই কারণেই এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ী/ব্যবসায় যুক্ত মহিলাদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন ভারতের ৩ উদ্যোক্তা। ফোর্বসের এশিয়াস পাওয়ার বিজনেস ওমেন ২০২২ তালিকায় নাম এই মহিলাদের। তাঁদের মধ্যে একজন বাঙালি। বাঙালি তথা ভারতবর্ষের সকলের কাছেই এটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। তবে তার মধ্যে বিরাট ব্যবসা নিপুণ হাতে সামলে চলেছেন এই মহিলারা। আর সেই কারণেই এশিয়ার এমন ২০ জন কৃতী মহিলার কথা তুলে ধরা হয়েছে এই তালিকায়। শুধু অভিনব ব্যবসা-ই নয়, সমাজ, মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তোলার ভাবনাকেও কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
তালিকায় বাঙালি
স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার(SAIL) চেয়ারপার্সন সোমা মণ্ডল রয়েছেন এই তালিকায়। তাছাড়া পার্সোনাল কেয়ার ব্র্যান্ড মামাআর্থের সহ-প্রতিষ্ঠাতা গজল আলাঘ এবং এমকিউর ফার্মার একেজিকিউটিভ ডিরেক্টর নমিতা থাপার এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। পরের দুইজনই উদ্যোক্তা হিসাবে চূড়ান্ত সফল। সেই সঙ্গে শার্ক ট্যাঙ্কের মতো শো-এর মাধ্যমে নতুন ব্যবসায়ীদেরও সাহায্য করছেন তাঁরা। নতুন ভাবনা, উদ্যোগে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন গজল ও নমিতা। আর সেই কারণে যুবসমাজের অনুপ্রেরণাও হয়ে উঠেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা বেশ জনপ্রিয়।
সোমা মন্ডল
ভুবনেশ্বরের বাসিন্দা সোমা মন্ডল ছোট থেকেই কৃতী পড়ুয়া। রৌরকেল্লার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। এরপর ন্যাশনাল অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানিতে যোগদান করেন। তাঁর মেধা এবং পরিশ্রমের ফলে একসময়ে সংস্থার ডিরেক্টরের পদ পর্যন্ত পৌঁছে যান। সোমার একজন সাধারণ শিক্ষানবিশ ইঞ্জিনিয়ার থেকে ডিরেক্টর হওয়ার যাত্রা অনুপ্রেরণা দেয় নতুন প্রজন্মকে। এরপর SAIL-এ যোগদান করে নতুন অধ্যায় শুরু করেন। আরও পড়ুন: Shark Tank season 2: ‘শার্ক ট্যাঙ্ক ইন্ডিয়া’র নতুন সিজন! রেজিস্ট্রেশন শুরু হওয়ার কথা জানাল সোনি
২০২১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব SAIL-এর চেয়ারপার্সনের পদে যোগ দেন। এর আগে তিনি সেইলের বাণিজ্যিক ডিরেক্টর ছিলেন। তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি এই পদে অভিষিক্ত হন। আর এই নতুন দায়িত্ব পেয়েই বাজিমাত করেন। তাঁর নেতৃত্বে, ইস্পাত প্রস্তুতকারী সংস্থার বার্ষিক আয় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.০৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি হয়ে যায়। ৩১শে মার্চ শেষ হওয়া শেষ অর্থবর্ষে সংস্থার মোট মুনাফা বেড়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা।
নমিতা থাপার
কৃতী ছাত্রী নমিতা একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। পুনের এমকিউর ফার্মার একেজিকিউটিভ ডিরেক্টর নমিতা। সংস্থার ব্যবসার মূল্য প্রায় $৭৩০ মিলিয়ন। ২০০৭ সালে তাঁর বাবা সতীশ মেহতা এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর এই সংস্থায় প্রধান অর্থনৈতিক আধিকারিক হিসাবে যোগদান করেন। তাঁর নেতৃত্বে দ্রুত হারে বাড়ে সংস্থার ব্যবসা।
তাঁর ব্যবসায়িক বুদ্ধি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতায় দ্রুত হারে সংস্থার আয় বাড়তে থাকে। ফোর্বসের রিপোর্ট অনুযায়ী সংস্থার আয় প্রায় দ্বিগুণ, ২,৫০০ কোটি টাকায় নিয়ে যেতে সাহায্য করেন নমিতা। আরও পড়ুন: Top 10 richest women: ভারতের ১০ ধনীতম মহিলা ব্যবসায়ীদের চেনেন?
নিজের ব্যস্ত শিডিউলের মাঝে থেকেও আরও অন্য কাজেও তিনি সফল। 'আনকন্ডিশন ইওরসেলফ উইথ নমিতা থাপার' নামে একটি ইউটিউব টক শো হোস্ট করেন। সেখানে নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলির উপর আলোচনা করেন। তিনি জনপ্রিয় টিভি শো 'শার্ক ট্যাঙ্ক ইন্ডিয়া'র মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ এবং গাইড করেন। তাঁদের বিক্রি বাড়াতে নিজের পরিচিতি, চেনাশোনাকে কাজে লাগান।
গজল আলাঘ
হোনাসা কনজিউমার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা গজল। তাঁর প্রসাধনী ব্র্যান্ড মামাআর্থ বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়াও দ্য ডার্মা কো, অ্যাকোয়ালজিকা এবং আয়ুগা-র মতো প্রসাধনী ব্র্যান্ড রয়েছে তাঁর পোর্টফোলিওতে। প্রতিটিরই অনলাইনে বিপুল চাহিদা রয়েছে। গজলের কথায়, তাঁর এই সংস্থাগুলির মূল লক্ষ্য হল, সাধ্যের মধ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিকহীন, ভেষজ উপাদানসহ উন্নত মানের প্রসাধনী তৈরি করা। নিজের অভিজ্ঞতায় গজল দেখেন, এমন প্রসাধনীর একটি অভাব রয়েছে বাজারে। নিজের নবজাতক ছেলের ত্বকের সমস্যার সময়েই এই বিষয়টি তিনি লক্ষ্য করেন। আর সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই স্বামী বরুণের সঙ্গে এই সংস্থার সূচনা করেন। আরও পড়ুন: Nykaa: ৫০ বছরে বয়সে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা, আজ দেশের ধনীতম মহিলা ফাল্গুনী
সিকোয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়ার নেতৃত্বে প্রায় ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের নয়া তহবিল পেয়েছে সংস্থা। আর তার ফলে গত জানুয়ারিতে ইউনিকর্নে পরিণত হয়েছে এই কোম্পানি। সংস্থার মোট বাজার মূল্য ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অর্থবর্ষে রেভেনিউ প্রায় দ্বিগুণ করেছে এই সংস্থা(১২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।