দু'জনের মধ্যে নাকি সবকিছু ‘ঠিক’ নেই। সেইসঙ্গে রাজ্যে ক্ষমতা নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, তত একটি মহলে সেই জল্পনা বাড়ছে। তারইমধ্যে উত্তরপ্রদেশের জেলা পঞ্চায়েত প্রধানের ভোটে বিজেপির ব্যাপক সাফল্যের যাবতীয় কৃতিত্ব মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং দলের কর্মীদের দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শনিবার সন্ধ্যায় একটি টুইটবার্তায় মোদী বলেন, 'উত্তরপ্রদেশের জেলা পঞ্চায়েতের নির্বাচনে বিজেপির অসামান্য জয় হল জনতা জনার্দনের আশীর্বাদ। যা উন্নয়ন, মানুষের সেবা এবং আইনের শাসনের জন্য দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগীজির নীতি এবং দলের কর্মীদের ক্লান্তহীন কঠোর পরিশ্রমেই এই জয়ের কৃতিত্বের দাবিদার। সেজন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং বিজেপির সংগঠনকে আন্তরিক অভিনন্দন।'
এমনিতে আগামী বছর বিধানসভা ভোটের মোদী এবং যোগীর মধ্যে শৈত্য তৈরি হয়েছে বলে দাবি করা হয়। যোগীর কাজে ‘নজর’ রাখার জন্য মোদী ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন আমলা একে শর্মাকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারেও দাবি করা হচ্ছিল। যদিও তা হয়নি। তারইমধ্যে যোগীর জন্মদিনের মোদী টুইটারে শুভেচ্ছা না জানানোয় সেই জল্পনা আরও জোর পায়। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মোদী এত কাঁচা রাজনীতিবিদ নন যে 'দ্বন্দ্বের' কারণে যোগীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবেন না। আবার যোগীও ভালোভাবে জানেন যে মোদী-বিরোধিতা করে কোনওদিনই বিজেপির অন্দরে টেকা যাবে না। তাই মোদী-যোগীর মধ্যে 'শৈত্যের' জল্পনা স্রেফ জল্পনাই। শুধু তাই নয়, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির অন্দরে ‘ক্ষমতার দড়ি টানাটানি চলছে’। যোগীর 'ঠাকুর পক্ষপাতিত্ব' মনোভাব নিয়ে বিজেপির অন্দরেই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
সেইসবের মধ্যে শনিবার উত্তরপ্রদেশের জেলা পঞ্চায়েত প্রধানের ভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে পুরোপুরি গেরুয়া ঝড় উঠেছে। ৭৫ টির মধ্যে ৬৭ টি আসনে জিতল বিজেপি। ২১ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে গেরুয়া শিবির। যা আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিকে স্বস্তি দেবে। আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের ফল প্রকাশের আগে শনিবার বিজেপির জয়ের ঘোষণা দেন উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশবচন্দ্র মৌর্য। সমাজবাদী পার্টির ‘হৃদয় থেকে বল, আবারও অখিলেশ আসছে (কাহো দিল সে, অখিলেশ ফিরসে)’ স্লোগানকে খোঁচা দিয়ে টুইটারে লেখেন, ‘হৃদয় থেকে বল, ২০২২ সালে আবারও বিজেপি আসছে (কাহো দিল সে, ২০২২ পে ভাজপা ফিরসে)।’
বিরোধীদের মধ্যে সমাজবাদী পার্টি এবং জোটসঙ্গী রাষ্ট্রীয লোক দল (আরএলডি) কিছুটা সম্মানরক্ষা করেছে। নিজেদের গড় এটাওয়া থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে সপা। আজমগঢ় হেসেখেলে জয় পেয়েছেন অখিলেশ যাদবের যাদব। যা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর লোকসভা কেন্দ্র। এটা, সন্ত কবীর নগর এবং বালিয়ায় বিজেপিকে চমকে দিয়েছে সপা। তবে মণিপুরি, রামপুর, কনৌজ এবং ফিরোজাবাদের মতো দুর্গে ধাক্কা খেয়েছে। ফারুক্কাবাদেও হেরেছে সপা। যেখানে সপার শীর্ষ নেতা ধর্মেন্দ্র যাদবের প্রাক্তন স্ত্রী মণিকা যাদবকে টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। আরএলডি জিতেছে বাগপতে। যে কেন্দ্র ঘিরে চরম নাটক হয়েছিল। ‘নিখোঁজ’ হয়ে গিয়েছিলেন আরএলডি প্রার্থী। মিলছিল না নথি। পরে সপা-আরএলডির প্রতিবাদের মুখে ভোট হয়। অন্যদিকে, প্রশাসনের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে ভোট বয়কট করেছিল মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)। কংগ্রেসের একটি মাত্র আসনে লড়াই করেছিল। সেখানেও হারের মুখ দেখতে হয়েছে। তাও রায়বরেলীতে সেই ধাক্কা খেয়েছে হাত শিবির। যা কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর নির্বাচনী এলাকা।