পৃথিবীর কাছ দিয়ে পারে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের আকারের একটি গ্রহাণু। তবে চিন্তার কিছু নেই। এই সাংঘাতিক ঘটনা হতে এখনও বহু দেরি। বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে নাসার বিজ্ঞানীরা জানান, বেনু নামের এক গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে আলোকপাত করেন ক্যালিফোর্নিয়ার নাসা জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী এবং ইকারাস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ডেভিড ফার্নোচিয়া। 'এমন নয় যে আমি বেনুকে নিয়ে আগের চেয়ে বেশি চিন্তিত। এই সংঘর্ষের প্রভাবের সম্ভাবনা খুবই সামান্য,' আশ্বাস দিলেন তিনি।
বেনুর গতিপথের বিশ্লেষণ অনুযায়ী আগামী একশো বছরের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা একেবারে শূন্য। তবে, ২১৩৫ সাল নাগাদ শুরু হচ্ছে চিন্তার বিষয়। সেই বছরেই, বেনু পৃথিবীর গা ঘেঁষে বেরিয়ে যাবে। সেই সময়ে পৃথিবী থেকে তার নিকটতম দূরত্ব থাকবে ১,২৫,০০০ মাইল বা আরও কাছাকাছি। যা কিনা পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের প্রায় অর্ধেক।
কিন্তু এই দূরত্বের বিষয়টাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বেনুকে পাস করার সঙ্গে সঙ্গে গুলতির মতো নিক্ষেপ করবে। যদি এই নির্দিষ্ট সময়ে গ্রহাণুটি একটি নির্দিষ্ট দূরত্বেই পৃথিবীর গা ঘেঁষে বের হয় (যাকে বিজ্ঞানীরা 'মহাকর্ষীয় কিহোল' বলেন) সেক্ষেত্রে এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। তখন সেটি এমন এক গতিপথে চলতে শুরু করবে যে প্রায় ৫০ বছর পর এসে পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষ হতে পারে।
তবে বেনু কোন পথে আসবে তা স্থিরভাবে বলা সম্ভব নয়। বিভিন্ন অন্যান্য প্রভাবও গ্রহাণুর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ২ সেপ্টেম্বর, ২১৮২ দিনটিই আশঙ্কাজনক। তবে সেক্ষেত্রেও সংঘর্ষের সম্ভাবনা ০.০৩৭ শতাংশ।
তাছাড়া বেনু প্রায় আধ কিলোমিটার প্রশস্ত। ফলে এটি সমগ্র পৃথিবী তছনছ করে দেবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কিন্তু সংঘর্ষের স্থানে যে অভাবনীয় বিধ্বংসী প্রভাব পড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
এই নয়া হিসেব মিলেছে নাসার OSIRIS-REx মহাকাশযানের সৌজন্যে। এটির মাধ্যমে বেনুকে খুব কাছ থেকে অধ্যয়ন করেছেন গবেষকরা। প্রায় দুই বছর ধরে চলেছে পর্যবেক্ষণ। মহাকাশযানটি গত মে মাসে বেনু ছেড়ে পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য রওনা দিয়েছে। গ্রহাণু থেকে সংগৃহীত শিলার নমুনা নিয়ে ফিরে আসছে OSIRIS-REx ।
এই ধরনের প্রায় ৪০% গ্রহাণুই এখনও অজানা বিজ্ঞানীদের। তবে কখনও কোনও গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনা হলে তা মোকাবিলারও প্রস্তুতি করছে নাসা। সেক্ষেত্রে রকেট ও যান পাঠিয়ে গ্রহাণুর গতিপথ সরিয়ে দেওয়ার পন্থা অবলম্বন করা হবে। আগামী ২০২২ সালে এর পরীক্ষামূলক লঞ্চ হওয়ার কথা। ডিডিমস নামের এক গ্রহাণুর উপর ট্রায়াল হবে।