বেআইনি মাদক কারবারের তদন্তে নেমে গ্রেটার নয়ডার সঙ্গে মেক্সিকো যোগ 'আবিষ্কার' করলেন এনসিবি-র গোয়েন্দারা। সামনে এল মুম্বই ও তিহাড় যোগও! হাতেনাতে পাকড়াও করলেন পাঁচ অভিযুক্তকে। ধৃতদের মধ্যে একজন মেক্সিকোর নাগরিক ছাড়াও তিহাড় জেলের এক কর্মীও (ওয়ার্ডেন) রয়েছেন!
এনসিবি-র দাবি, এই কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মেক্সিকোর কুখ্যাত ক্রাইম সিন্ডিকেট 'কার্টেল দে জ্যালিস্কো নুয়েভা জেনারেশন'! ধৃত মেক্সিকানকে তাদের তরফেই পাঠানো হয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।
এনসিবি সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রেটার নয়ডা শিল্প তালুকের ঠিক বাইরে একটি পরীক্ষাগার তথা কারখানায় গোপনে মেথামফেটামিন (নেশা করার সামগ্রী) উৎপাদন করা হচ্ছিল।
মঙ্গলবার এনসিবি-র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জ্ঞানেশ্বর সিং জানান, দিল্লির নিকটবর্তী গৌতম বুদ্ধ নগর এলাকায় ওই গবেষণাগারটি চালাচ্ছিলেন একজন ভারতীয় নাগরিক।
এই ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মেক্সিকোর যে নাগরিককে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁকে ভারত পাঠানো হয়েছিল, যাতে তিনি ওই মাদকদ্রব্য তৈরির জন্য একটি কারখানা এখানে নির্মাণ করাতে পারেন এবং সেই মাদক মেক্সকোয় পাচার করার আগে তার গুণমান যাচাই করতে পারেন!
চলতি বছরের প্রথম দিকে ওই ব্যক্তি টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারতে আসেন। আর তারপর থেকে গ্রেটার নয়ডার একটি আবাসনে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গত ২৫ অক্টোবর ওই গবেষণাগার তথা কারখানায় অভিযান চালান এনসিবি গোয়েন্দারা। সেখান থেকে কঠিন ও তরল অবস্থায় প্রায় ৯৫ কিলোগ্রাম মেথামফেটামিন উদ্ধার করেন তাঁরা। এছাড়াও, ঘটনাস্থল থেকে নানা ধরনের রাসায়নিক উদ্ধার করা হয়েছে।
এনসিবি-র দাবি, মেক্সিকোয় পাচার করার পাশাপাশি ভারতের নানা প্রান্তেও এই মাদক গোপনে পাচার ও বিক্রি করা হত। গত ২৫ অক্টোবরের অভিযানে এনসিবি-র সঙ্গে অংশ নেন দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের সদস্যরাও।
জ্ঞানেশ্বর সিং আরও জানান, গত ২৫ অক্টোবর অভিযান চলাকালীন সেখান থেকে পশ্চিম দিল্লির বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী এবং তিহাড় জেলের এক কর্মীকেও পাকড়াও করা হয়।
এনসিবি-র দাবি, এই দু'জনই বেআইনিভাবে এই গবেষণাগার তথা কারখানা গড়ে তুলতে মাদক কারবারিদের সবরকম সাহায্য করেছিলেন। যন্ত্রপাতি কেনা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সংগ্রহ, সব দায়িত্বই সামালাতেই এই দু'জন!
সেইসঙ্গে, মাদক তৈরির জন্য মুম্বইয়ের বাসিন্দা এক কেমিস্টকেও দলে টেনেছিলেন এই মাদক কারবারিরা।
এই কারবারের ছক কষা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। সেই সময় পশ্চিম দিল্লির ওই ব্যবসায়ী মাদক কারবারে জড়িত থাকার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন এবং বেশ কিছুদিনের জন্য তিহাড় জেলে বন্দি থাকেন।
অন্যদিকে, সেখানে আগে থেকেই কর্মরত ছিলেন তিহাড়ের ধৃত কর্মী। ওয়ার্ডেন হওয়ায় তাঁর কাজ ছিল বন্দিদের দেখভাল করা। এই সুযোগে তিনি মাদক কারবারে যুক্ত বন্দিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। সেই বন্দিদের মেক্সিকো যোগ আগে থেকেই ছিল।
পরবর্তীতে এই কারা-কর্মীর সঙ্গে পশ্চিম দিল্লি ব্যবসায়ীর বোঝাপড়া হয়। তাঁরা ঠিক করেন, গোপনে মাদক তৈরি করা তা বিদেশে পাচার করবেন। ২০২০ সালে ওই ব্যবসায়ী জেল থেকে ছাড়া পান।
এরপর পরিকল্পনা মাফিক সবকিছু এগোয়। শুরু হয় মাদক কারবার। খুব সম্ভবত, ৫-৬ মাস আগে সংশ্লিষ্ট গবেষণাগার তথা কারখানাটি গড়ে তোলা হয়। তবে, তার জন্য টাকা কোথা থেকে এল, তা খতিয়ে দেখছে এনসিবি।