লন্ডন মানেই সুখের স্বর্গরাজ্য, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। অন্তত সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তেমনই।
এলিনা গেওরঘে। ২০২২ সালের আগে তিনি কখনও ফুড ব্যাঙ্কে খেতে যাননি। কিন্তু ব্রিটেনের লক্ষাধিক মানুষের মতোই, আজ তাঁর প্রতিদিনের ব্যয়, আয়ের তুলনায় বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে উপায় নেই।
গত কয়েক সপ্তাহে এই নিয়ে তৃতীয়বার ফুড ব্যাঙ্কে গিয়ে খেলেন এলিনা। ৩৫ বছর বয়সী এলিনা একজন মা। তাঁকে 'বেকার' ভাবলেও ভুল করবেন। এক নার্সারি স্কুলের অ্যাডমিন হিসাবে কাজ করেন। তা সত্ত্বেও এখন তাঁকে 'ড্যাডস হাউস' নামে লন্ডনের একটি দাতব্য সংস্থায় খেতে যেতে হচ্ছে। তবে এই নিয়ে তাঁর কিন্তু লজ্জার কিছুই নেই। তিনি যে টেবিলে বসে, সেখানেই তাঁর সঙ্গে এক প্রাক্তন শেফ এবং এক ব্যবসায়ী দুপুরের আহার করছেন। 'আমার চারপাশের সবাই আমার মতোই,' খেতে খেতেই জানালেন এলিনা। আরও পড়ুন: Infosys-এর শেয়ার থেকে ঋষি সুনাকের স্ত্রীর আয় জানেন? অবাক হয়ে যাবেন
চারপাশের সবাই দেখছেন। ব্রিটেনের দ্বি-সংখ্যার মুদ্রাস্ফীতিতে চাপে মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবীরাও। মাঝারি বেতনেও তাই খাবার জোটাতে হিমসিম খাচ্ছেন অনেকে। ব্রিটেনের লক্ষ লক্ষ মানুষ, এই প্রথমবার এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন। Asda ইনকাম ট্র্যাকারের তথ্য অনুসারে, গত নয় মাসে, অল্প বা কোনো বিবেচনামূলক আয় নেই এমন ব্রিটিশ পরিবারের সংখ্যা ২০% থেকে বেড়ে ৪০% পর্যন্ত হয়ে গিয়েছে।
অনেকেই খাদ্য ও বাসস্থান বাদে বাকি কিছু জোটাতে দেনার দায়ে ডুবে যাচ্ছেন। জোসেফ রাউনট্রি ফাউন্ডেশনের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৭০ লক্ষ পরিবার চলতি বছর বাড়িতে হিটিং, প্রসাধন সামগ্রী বা শাওয়ারের মতো 'বিলাসিতা'য় কাটছাঁট করেছেন। এমনও পরিবার আছে, যাঁরা দিনে একবেলা খেয়ে কাটাচ্ছেন।
দ্বিতীয় সর্বনিম্ন আয়ের বন্ধনীতে বসবাসকারী ২০% মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ অনুসারে, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই গোষ্ঠীটির হাতে অন্তত কিছুটা অতিরিক্ত ব্যয়ের উপযোগী টাকা থাকত। সেপ্টেম্বর মাসে এই গোষ্ঠীর মানুষদের গড় আয় ছিল সপ্তাহে £৪০৭ ($৪৭৩)। কিন্তু কর এবং প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন বাড়ি ভাড়া, হিটিং এবং খাওয়ার খরচ মিটিয়ে তাঁদের হাতে মাত্র £২.৬৬ ডলার করে পড়ে থাকছে। এতে বড় জোর এক কাপ কফি হবে।
গত বছরে কিন্তু সেই একই জিনিসে খরচ করার পর, মানুষের হাতে £৫৫ থাকত। মূল্যবৃদ্ধি যে কতটা, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই খুব স্পষ্ট।
সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলি, যাঁদের মোট আয় সেপ্টেম্বরে প্রতি সপ্তাহে মাত্র £১৮৯ ছিল, তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় চাহিদাটুকু পূরণ করার মতোও পর্যাপ্ত অর্থ নেই। আরও পড়ুন: Rishi Sunak:১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রজ্জলিত দিওয়ালির প্রদীপ! 'যতটা পারব করব..' বার্তা ঋষি সুনাকের
'হতাশা ছাড়া অন্য কিছু অনুভব করা কঠিন,' বলছেন অ্যাবিগেল ডেভিস, ল'বরো ইউনিভার্সিটির সামাজিক নীতি গবেষক। গত ২২ বছর ধরে দারিদ্র্য এবং অসাম্য নিয়ে গবেষণা করছেন। ব্রিটেনের এমন পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত তিনিও।
ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছে এটিই যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।