করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে নিট এবং জেইই পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে অবিজেপি রাজ্যগুলি। তার আগে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল ‘নিশাঙ্ক’ অবশ্য জানিয়ে দিলেন, নির্দিষ্ট সূচি মেনেই পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে রয়েছে অধিকাংশ প্রার্থীদের।
'হিন্দুস্তান টাইমস'-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে পোখরিয়াল দাবি করেছেন, ‘প্রতিদিন আমি নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠদের (সংখ্যায় বেশি, কিন্তু প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি) অসংখ্য মেল পাচ্ছি। তাতে অভিভাবক এবং পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, তাঁরা মানসিক চাপের মধ্যে আছেন এবং তাঁরা গত দু'তিন বছর ধরে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁরা শূন্য শিক্ষাবর্ষ (পরীক্ষা ছাড়াই পরের ধাপে তুলে দেওয়া) চান না।’
অধিকাংশ পড়ুয়া যে নির্ধারিত সূচি মেনে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী, তা প্রমাণের জন্য অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোডের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন পোখরিয়াল। তিনি জানান, ৮.৫৮ লাখ জেইই (সর্বভারতীয় জয়েন্ট) প্রার্থীর মধ্যে ৭.৪১ লাখ জন অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করেছেন। নিটের ক্ষেত্রেও ছবিটা এক। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যেখানে ১৫.৯৭ লাখ, সেখানে প্রথম পাঁচ ঘণ্টায় ৬.৮৪ লাখ প্রার্থী অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করে নিয়েছেন।
তা সত্ত্বেও বিরোধীরা অনড়। পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন পড়ুয়াদের একাংশও। এই পরিস্থিতিতে কি পরীক্ষা ৩০ বা ৬০ দিন পিছিয়ে দেওয়া যায় না? মন্ত্রী বলেন, 'কবে মহামারী শেষ হবে, সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই সাবধানতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়াই হল সমাধান।'
কিন্তু বিকল্প পদ্ধতিও তো ভাবা যেতে পারত? যেমন অনলাইন পরীক্ষা আয়োজন করে বা বোর্ডের নম্বর বিবেচনা করে সরাসরি প্রার্থীদের বেছে নেওয়া হত? সে বিষয়ে পোখরিয়াল বলেন, 'উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় পড়ুয়াদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন আছে। সবথেকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া হল অবলজেকটিভ টেস্ট এবং বছরের পর বছর ধরে তা বিবর্তিত হয়ে আসছে। আমরা যদি সেই ব্যবস্থা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া পালটানোর চেষ্টা করি, তাহলে কেরিয়ারের ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। আমি সর্বদাই প্রথম সুরক্ষায়, তারপর পরীক্ষায় জোর দিয়েছি। কিন্তু পরে পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রে এমন একটি পরিস্থিতির উদ্ভূত হতে পারে, যখন পুরো একটি বছর নষ্ট হয়ে যাবে। তাই উপযুক্ত সতর্কতার সঙ্গে সেই পরীক্ষাগুলি আয়োজন করাই হল মধ্যপন্থা।'
পোখরিয়াল জানান, পড়ুয়াদের স্বার্থে ৯৯ শতাংশের বেশি প্রার্থীদের প্রথম পছন্দের কেন্দ্র ও শহরে আসন ফেলেছে 'ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি' (এনটিএ)। জয়েন্টে মাত্র ৩৩২ জন প্রার্থী তাঁদের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তনের আর্জি জানিয়েছেন। তা অবশ্য মানা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পোখরিয়াল।
পাশাপাশি, জেইই মেনের ক্ষেত্রে পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ৫৭০ থেকে বাড়িয়ে ৬৬০ করা হয়েছে। নিটের ক্ষেত্রে তা ২,৫৪৬ থেকে বাড়িয়ে ৩,৮৪৩ করা হয়েছে। জেইই মেনে আবার শিফটের সংখ্যা আট থেকে বাড়িয়ে ১২ করা হয়েছে। তার ফলে প্রতি শিফটে ১.৩২ লাখ প্রার্থীর পরিবর্তে এখন ৮৫,০০০ জন পরীক্ষা দেবেন। মন্ত্রী বলেন, 'সব অভিভাবক এবং পড়ুয়াদের কাছে আমার আর্জি যে পরীক্ষাকেন্দ্রের সুরক্ষার বিষয়ে আমাদের উপর ভরসা রাখুন।' সেজন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি ) তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পোখরিয়াল।