গোপনসূত্রে পাওয়া এক খবরের ভিত্তিতেই গত ৫ মে একটি 'সেফহাউজে' তল্লাশি চালিয়ে নিট পরীক্ষার জালিয়াতির পর্দা ফাঁস করে বিহার পুলিশ। পটনার শাস্ত্রীনগর থানার দায়িত্বে থাকা স্টেশন হাউজ অফিসার অমর কুমারের নেতৃত্বে চালানো অভিযানেই এই সব দুর্নীতি সামনে আসে। এখন গোটা দেশে এই নিয়ে চর্চা চলছে। এই আবহে অমর কুমার বলছেন, 'যে টিপ-অফ পেয়েছিলাম, তা একদম সঠিক ছিল। তবে এভাবে প্যান্ডোরার বাক্স খুলবে, তা আশা করিনি। আমরা এই মামলার সত্য উদ্ঘাটনে অনেক কাজ করেছি। এই আবহে সবার সামনে এর ফলাফল আছে। তবে এখনও এই মামলায় আরও অনেক দূর যেতে হবে।' (আরও পড়ুন: কেন, কীভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘায় ধাক্কা? দুর্ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন মালগাড়ির সহকারী চালক)
আরও পড়ুন: ১ কোটি জরিমানা থেকে ১০ বছর জেল, NEET বিতর্কের মাঝে কার্যকর প্রশ্নফাঁস বিরোধী আইন
আরও পড়ুন: 'ছেঁড়া OMR…', NEET নিয়ে বড় অভিযোগ পানিহাটির ছাত্রীর, কী বলল কলকাতা হাই কোর্ট?
জানা গিয়েছে, গত ৫ মে নিট পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট পরই পুলিশের কাছে গোপন সূত্রে একটি খবর গিয়েছিল। জানানো হয়েছিল, একটি সাদা রঙের রেনল্ট ডাস্টার গাড়ি পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে দেখা গিয়েছে। তদন্ত চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে এই গাড়ি একটি নির্দিষ্ট গ্যাং সদস্যের। এর আগে সেই গ্যাং সদস্যের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। আর গত ৫ মে বিহার পুলিশের এসএইচও অমর কুমারের কাছে যে খবর আসে, তাতে ইঙ্গিত মেলে যে নিট পরীক্ষায় 'অনিয়ম' হয়ে থাকতে পারে। (আরও পড়ুন: সরকারি কর্মীদের ৩০০ কোটি 'হাওয়া' করল সরকার, অবশেষে বেতন নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত CM-এর)
আরও পড়ুন: পান্নুন হত্যার ছকে ধৃত নিখিলের বিচার শুরু আমেরিকায়, মামলা নিয়ে বড় আপডেট দিল MEA
জানা গিয়েছে, গত ৫ মে যে সাদা গাড়ির বিষয়ে বিহার পুলিশের কাছে খবর এসেছিল, সেটি বাজেয়াপ্ত করে তা থেকে ৪ জন নিট পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড উদ্ধার হয়েছিল। সেই গাড়ি থেকে আটক হয়েছিলেন ৩ জন - সমস্তিপুরের সিকান্দর যাদভেন্দু (৫৬), দানাপুরের অখিলেশ কুমার (৪৩) এবং রোহতাসের বিট্টু কুমার (৩৮)। এই তিনজনকে পুলিশ জেরা করে। সেই সময় পেশায় জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সিকান্দর তদন্তকারীদের জানান, সঞ্জীব সিং, রকি, নীতীশ কুমার এবং অমিত আনন্দ নামক ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং 'সেটিং' হয়। এদিকে সেই গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া চারটি অ্যাডমিট কার্ড যাদের ছিল, তাদের পুলিশ গ্রেফতার করে।
আরও পড়ুন: নিজ্জরের দুঃখে সংসদে নীরবতা পালন, 'খলিস্তানপ্রীতি' নিয়ে কানাডাকে আয়না দেখাল ভারত
আরও পড়ুন: ৪ দফার বকেয়া ডিএ মেটানোর দাবি কর্মীদের, অপরদিকে বেতন বাড়াতে কমিশন গঠন রাজ্যের
এরপর বিহার পুলিশের ইকোনমিক অফেন্স ইউনিটের হাতে একের পর এক প্রমাণ এসেছে এই সংক্রান্ত। জানা গিয়েছে, তল্লাশি চালিয়ে তদন্তকারীরা ৬টি পোস্ট ডেটেড চেক উদ্ধার করেছেন। তা থেকে জানা গিয়েছে, নিটের তথাকথিত প্রশ্নপত্র ফাঁস করার জন্যে পরীক্ষার্থী পিছু ৩০ লাখ টাকা করে নিয়েছিল মাফিয়া গোষ্ঠী। ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ইওইউ) মানবজিৎ সিং ধিলোঁ সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে এই চেক উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'তদন্ত চলাকালীন, গোয়েন্দারা ছয়টি পোস্ট-ডেটেড চেক উদ্ধার করেছে। পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার জন্যে সেই টাকা নেওয়া হয়েছিল।' রিপোর্ট অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া চেকগুলির সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলির অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
এদিকে পরীক্ষার আগেই নিট প্রশ্নপত্র হাতে আসার কথা স্বীকার করে বিহারের এক পরীক্ষার্থী। সংবাদসংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিহার পুলিশের ইকোনমিক অফেন্স ইউনিটের হাতে ধৃত অনুরাগ যাদব নামক এক পরীক্ষার্থী জেরায় জানিয়েছেন, ৪ মে রাতে তাঁর আঙ্কেল তাঁকে অমিত আনন্দ এবং নীতীশ কুমার নামক দু'জনের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে নিট-এর প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্র দেওয়া হয়েছিল। সারা রাত বসে আমাকে সেই উত্তরপত্র মুখস্ত করতে বলা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, ধৃত অনুরাগ সমস্তিপুরের বাসিন্দা। সে কোটা থেকে সমস্তিপুরে ফিরেছিল নিট পরীক্ষায় বসার জন্য। এদিকে অনুরাগের আঙ্কেল একজন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়র। এদিকে অনুরাগের বয়ানের অমিত আনন্দ পুলিশের কাছে স্বীকার করে যে দানাপুর পুরসভার জুনিয়র ইঞ্জিনিয়র সিকন্দরের সঙ্গে মিলে সে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ষড়যন্ত্র করেছিল। ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকা দরে সে এক এক পরীক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছিল। এদিকে এই ঘটনায় আয়ুষ নামক এক পরীক্ষার্থীর বাবা অখিলেশও গ্রেফতার হন। তিনিও প্রশ্ন ফাঁসের কথা স্বীকার করেন। এদিকে অনুরাগের মা রীনাদেবীও প্রশ্নফাঁসের কথা স্বীকার করেন পুলিশি জেরায়।