বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অনুমোদিত নয়া শিক্ষা নীতিতে উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নেওয়া ফি সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, এই বাবদে বা অন্য কোনও সূত্রে আর্থিক লাভ হলে তা শিক্ষা ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করতে হবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক এই সংক্রান্ত নীতি সমূহ।
‘অলাভজনক সংস্থা’ হিসেবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাদের আর্থিক পরিস্থিতির নিয়মিত অডিট এবং হিসেব-নিকেশ প্রকাশ করতে হবে। তহবিলে যদি কোনও বাড়তি অর্থ থাকে, তা হলে তা পুনর্বিনিয়োগ করতে হবে শিক্ষা ক্ষেত্রেই।
উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত আর্থিক হিসেব-নিকেশ জনস্বার্থে অভিযোগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে। এই ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবে জাতীয় অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল এবং জাতীয় উচ্চ শিক্ষা নিয়ন্ত্রক কাউন্সিল (NHERC) তাদের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অন্যতম বিষয় হিসেবে তা বিবেচনা করবে।
সমস্ত বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফি ও চার্জ সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করতে হবে এবং ছাত্রদের ভর্তি হওয়ার সময় নেওয়া সমস্ত ফি মাত্রাতিরিক্ত বাড়ানো চলবে না। ফি নির্ধারণ ব্যবস্থার দ্বারা মূলত খরচ তোলার পাশাপাশি নিজেদের সামাজিক কর্তব্য পালন করায় অবিচল থাকবে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি।
যথোপযুক্ত পর্যায়ক্রমিক অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থা এবং স্বায়ত্বশাসন পদ্ধতির মাধ্যমে ১৫ বছর সময়কালের মধ্যে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়মিত উদ্ভাবন ও শ্রেষ্ঠত্বের মাধ্যমে ধীরে ধীরে স্বাধীন শ্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে উন্নীত হতে হবে।
উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির যথাযথ পর্যায়ক্রমিক অ্যাক্রেডিটেশন-এর জন্য তাদের সঠিক মূল্যায়ন করতে তৈরি হবে বোর্ড অফ গভরনর্স। নীতি অনুযায়ী, হবোর্ডের সদস্য নির্বাচনে সমতা বজায় রাখা হবে।
কোনও রকম বহিরাগত প্রভাব ছাড়া যে কোনও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে তার বোর্ড অফ গভরনর্স। আশা করা যাচ্ছে ২০৩৫ সালের মধ্যে সমস্ত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের বোর্ড গঠন করা সম্ভব হবে।
একক ভাবে পরিচালিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আইন বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে একক ভাবে পরিচালিত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বহু বিষয়ে সামগ্রিক শিক্ষাদান করার বিষয়ে সচেষ্ট হবে।
পেশাদার বা সাধারণ শিক্ষাদানের সমস্তস উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০৩০ সালের মধ্যে দুই ধরনের শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারেই দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।
কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত স্নাতক ও প্রযুক্তিবিদ গড়ে তুলতে কৃষিবিজ্ঞান ও সংলগ্ন বিষয়ে শিক্ষার মান, উদভাবনমূলক গবেষণা এবং বাজার-নির্ভর প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এই বিষয়ে কৃষি ভিত্তিক প্রযুক্তি পার্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করতে হবে যাতে তার সময়সীমা, কাঠামো ও শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে স্নাতকদের কাজের সাযুজ্য বজায় থাকে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবায় একই সঙ্গে একাধিক মাধ্যম ব্যবহারের লক্ষ্যে আদানপ্রদান রীতি মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ সম্পর্কে পড়তে হলে আয়ুর্বেদ, যোগ ও ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধ ও হোমিওপ্যাথি (আয়ুষ) সম্পর্কে শিক্ষালাভ করা আবশ্যিক হবে।
আইন শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সহ্গতি রেখে উন্নয়ন প্রয়োজন। এই বিষয়ে বিস্তৃততর জ্ঞান আহরণ এবং সময়োচিত সুবিচার দেওয়ার জন্য নতুন প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে।
প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রেও একাধিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ থাকতে হবে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা বিষয়গুলিতে পেশাদার তৈরির ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে হবে ভারতকে। এই কারণে স্নাতক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, থ্রি-ডি মেশিনিং, বিগ ডেটা অ্যানালিসিস, মেশিন লার্নিং, জেনোমিক স্টাডি, বায়োটেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি, নিউরোসায়েন্স ইত্যাদি।