বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অমুমোদিত নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী এবার ভারতে ক্যাম্পাস গড়তে পারবে বিদেশের অগ্রণী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বড় অংশের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ এবং আইআইটি-সহ দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে একাধিক শাখায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে বহুশৃঙ্খলাবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়ে ওঠে, সেই বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে নয়া শিক্ষা নীতিতে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৩,০০০ বা তার বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নজর দেওয়া হয়েছে।
২০৩৫ সালের মধ্যে মোট শিক্ষার্থী ভর্তির অনুপাত ২৬.৩% থেকে বাড়িয়ে ৫০% করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
সময়ের সঙ্গে একক শাখাযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই বহুশৃঙ্খলাবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হবে। আগামী ১৫ বছরে সংশ্লিষ্ট বা অ্যাফিলিয়েটেড কলেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
দেশের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থায় নামকরণের জটিলতা দূর করতে ‘বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ধার্য’, ‘সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়,’ ‘একক বিশ্ববিদ্যালয়’-এর মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সরাসরি ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে গণ্য হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় বলতে বোঝানো হবে যে কোনও বহুশৃঙ্খলাবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেখানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে উচ্চ মানের, গবেষণামূলক এবং গোষ্ঠীবদ্ধ শিক্ষা দেওয়া হয়।
আইআইটি-র মতো শীর্ষ স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ ও বহুশৃঙ্খলাবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হবে। এই ব্যবস্থায় কলা ও হিউম্যানিটিজ শাখার পড়ুয়ারা আরও বেশি বিজ্ঞানচর্চায় আগ্রহী হবেন।
উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বহুশৃঙ্খলাবিশিষ্ট ও আরও মজবুত করতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে ভাষা, সাহিত্য, সংগীত, দর্শন, ভারততত্ত্ব, শিল্পকলা, নৃত্য, নাট্যশাস্ত্র, শিক্ষা, গণিত, পরিসংখ্যান তত্ত্ব, পিওর ও অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স, সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি, ক্রীড়া, অনুবাদ এবং ভাষান্তর ইত্যাদি বিভাগ।
স্নাতক স্তরে ৩ অথবা ৪ বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু হবে, যাতে থাকবে কোর্স ত্যাগ করার বিবিধ ব্যবস্থা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বৃত্তিমূলক ও পেশাদার প্রশিক্ষণ-সহ একবছরের শিক্ষা সমাপ্ত করার সুবিধা, ২ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স এবং ৩ বছরের স্নাতক ডিগ্রি। তবে পড়ুয়াদের ৪ বছরের বহুশৃঙ্খলাবিশিষ্ট স্নাতক কোর্স সম্পূর্ণ করাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মান্যতা পাবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা সংরক্ষণের জন্য একটি অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট গঠন করা হবে। সেখানে প্রত্যেক পড়ুয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষিত হবে।
চার বছরের স্নাতক স্তরের ডিগ্রি কোর্সে কোনও বড় মাপের গবেষণাধর্মী প্রকল্প থাকলে ডিগ্রিতে ‘উইথ রিসার্চ’ শব্দবন্ধটি যুক্ত হবে।
উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বড় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না, বরং নিয়মিত ও সাগ্রিক মূল্যায়নের পথে হাঁটবে।
গোটা বিশ্বের কাছে সুলভ মূল্যে অন্যতম উচ্চ শিক্ষার পীঠস্থান হিসেবে ভারতকে তুলে ধরা হবে। প্রতিটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকবে আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ দফতর।
দেশের প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বিদেশে ক্যাম্পাস গড়ার জন্য উৎসাহিত করা হবে। একই ভাবে বিশ্বের প্রথম ১০০টি উচ্চ মানের বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতে ক্যাম্পাস গড়তে দেওয়া হবে।
ভারতে ক্যাম্পাস গড়তে ইচ্ছুক আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য একটি আইনি পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ, স্বশাসন ও ভারতের স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলির সমতুল্য বিশেষ ক্ষমতা অর্পণ করা হবে।
পড়ুয়াদের মানসিক অবসাদ ও স্ট্রেস সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
তফশিলি জাতি ও উপজাতি, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণি এবং অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের জন্য মেধার ভিত্তিতে বিবিধ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
সমস্ত স্কুল ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী দশকে দফায় দফায় বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৫০% শিক্ষার্থী স্কুল ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারফৎ বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুবিধা পাবে।
২০১৩ সালে চালু হওয়া B.Voc ডিগ্রি বহাল থাকছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য স্নাতক স্তরের পড়ুযাদের জন্যও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুবিধা থাকছে।
ভারতে তৈরি হওয়া ‘লোক বিদ্যা’ সমস্ত পড়ুয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে একটি জাতীয় কমিটি (NCIVE) গঠন করবে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক।
নতুন শিক্ষা নীতিতে একটি জাতীয় গবেষণা কেন্দ্র (NRF) গড়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া নয়া নীতিতে একটি একক উচ্চ শিক্ষা কমিশন (HECI) গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।